Scrollwhite

মাহমুদুল হক ফয়েজ My name is Mahmudul Huq Foez, I am a journalist, leaving in a small town, named Noakhali , which is situated in coastalzila of Bangladesh

হোমপেইজ | আর্টিকেল | ছোটগল্প | ফিচার | মুক্তিযুদ্ধ | বনৌষধি | সুস্বাস্থ্য | কবিতা | যোগাযোগ

মানুষ যখন মনুষত্ব হারায়


মানুষ যখন মনুষত্ব হারায়
মাহমুদুল হক ফয়েজ  

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ষোল বছরের  কিশোর মিলনকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে সে এলাকার স্থানীয় কিছু উন্মত্ত জনতা । তাদের অভিযোগ ছিলো মিলন একজন ডাকাত।


 পুলিশই নাকি তাকে মেরে ফেলার জন্য জনতাকে উস্কে দিয়েছিলো। গত ২৭ জুলাই সকালে প্রকাশ্যে নৃশংস এ হত্যাকান্ডটি ঘটে। এ ঘটনাটি যখন ঘটছিলো তখন একজন প্রত্যক্ষদর্শী পুরো ঘটনাটির ভিডিও চিত্র ধারন করেন।(প্রথম আলো ৮ আগষ্ট,২০১১) সেদিনই কোম্পানীগঞ্জে আরো হত্যার ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে মোট ছয় জনকে এভাবে হত্যা করা হয়। এর কিছুদিন আগে পবিত্র শবে-বরাতের রাতে ঢাকার আমিন বাজারে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সব ঘটনার একই অজুহাত এরা ডাকাত। তাই এদেরকে পিটিয়েই মেরে ফেলতে হবে। আইন পুলিশ রাষ্ট্র কোনো কিছুরই তোয়াক্কা নেই। গত কয়দিন এভাবে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে  গেছে। শুধু এ সময়টাতেই নয় গত কয় বছর ধরে প্রায়ই এ রকম ঘটনা সারা দেশেই ঘটছে। এ রকম কিছু হলে পত্র পত্রিকায় কয়দিন লেখালেখি হয়। তারপর মানুষ সে সব ভুলে যায়। এভাবে ঘটনাগুলো ঘটেই চলেছে। এরকম আরো নানান ঘটনা দেশের আনা্চে কানাচে ঘটছে। তার খবর অনেক সময় পত্র পত্রিকায় আসেনা। মানুষও জানতে পারেনা। ঠিক এ রকম  একটি ঘটনা ২০০৪ সনে নোয়াখালীর চরাঞ্চলে সঙ্ঘটিত হয়েছিলো। সে বছর মাত্র এক সপ্তাহে ঊনচল্লিশজন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হ্য়। এখবর তেমন প্রচারিত হয়নি। বলা চলে প্রকাশ করতে দেয়া হয় নি। এ হত্যাযজ্ঞের পিছনে যাঁরা ছিলেন তাঁরা সবাই ছিলেন ক্ষমতাধর ব্যক্তি। কিন্তু স্থানীয় কিছু সংবেদনশীল মানুষ সে হত্যা কান্ডের প্রতিবাদ করেছিলেন। তখন সে সময়ের রাষ্ট্র যন্ত্রে যারা অধিষ্ঠিত ছিলেন তারা এনিয়ে কেউ টুশব্দটি করেনি। অথচ দেশের ইতিহাসে এত বড় একটি হত্যাযজ্ঞ লোকচক্ষুর অন্তরালে ধামাচাপা পড়ে গেলো। কিছু উন্মত্ত মানুষের নির্মমতায় বিনাবিচারে নৃশংসভাবে খুন হয় ঊনচল্লিশজন মানুষ। নোয়াখালীর পুলিশের খাতায় নিহতদের নাম লিপিবদ্ধ করা আছে।  
  
স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে মাঝে মাঝে কেন মানুষ এত হিংস্র  হয়ে উঠে। মানুষ কারণে  অকারণে যখন রক্তখেকো হয়ে উঠে তখন সে শ্বাপদ যন্তুর চেয়েও উন্মত্ত হয়ে উঠে। অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে। খুন ছাড়া সে তখন আর কিছুই বুঝতে চায়না। তখন তার ভিতরে কি কাজ করে? কেন সে তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা? সৃষ্টির আদি থেকে মানুষ এ প্রশ্ন করে আসছে। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মানুষের কাছে ধর্ম এসেছে। সমাজ সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। আইন হয়েছে। এখন আমরা আধুনিক যুগে বাস করছি। তবু আমরা কেনো প্রাগৈতিহাসিক রয়ে গেলাম। আমাদের মনোবিজ্ঞানী ও সমাজ বিজ্ঞানীরা হয়তো এর কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। সাম্প্রতিক এ সকল হত্যাকান্ডের  ব্যপারে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন। রাষ্ট্রের আইন  যখন দুর্বল হয়ে যায়, আইনের প্রতি যখন মানুষের আস্থা হারিয়ে যায়, কোনো বিচার প্রার্থী হয়ে মানুষ যখন কোনো বিচার পায়না, চিহ্নিত অপরাধিদের যখন কোনো শাস্তি হয়না তখন মানুষের ভিতরে হতাশা জন্ম নেয়। এ হতাশা থেকে আসে ক্ষোভ। আর এ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশই মানুষের নৃশংসতা। এ থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে রক্তখেকো হয়ে উঠে। যে যেভাবেই ব্যাখ্যা দিক এরকম হত্যাকান্ড কি কোথাও  গ্রহনযোগ্যতা পাবে? আমাদের দেশের আইনের যত ফাঁক ফোঁকরই থাকুক, যত দূর্বলতাই থাকুক এ রকম হত্যাকান্ড আইনের কাছে মৃত্যুদন্ডযোগ্য যে কোনো হত্যাকান্ডের মতই অপরাধ। তাই এ রকম যে কোনো হত্যাকান্ডকে বিবেকমান কেউ স্বাভাবিক মেনে নিতে পারেনা। এধরনের হত্যাকান্ড চরম মানবাধিকার লংঘন। এখন  প্রশ্ন জাগে ডাকাত হলেই কি কাউকে এ রকম পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে ? এর কি কোনো আইন নেই? কোনো বিচার নেই? মানবাধিকার বলে কি কিছুই নেই? যত ভয়ংকর খুনি ডাকাতই হোক তার বিচার চাওয়ার ও পাওয়ার অধিকার রয়েছে। 

বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘের অধিনে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে সদস্য ভুক্ত। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কতৃক মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষনাপত্র গৃহীত হয়। ১৪০টি দেশনাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তিটি  ২৩ মার্চ ১৯৭৬ সন হতে কার্যকর হয়। বাংলাদেশ চুক্তিতে অন্যতম স্বাক্ষরকারি দেশ। এই সার্বজনীন মানবাধিকার সনদে, অন্যায়ভাবে হত্যা করা, এই প্রকারের হত্যার চেষ্টা হত্যার হুমকি এবং অপহরণ  বিষয়ে আর্টিকেল-৬ এ উল্লেখ আছে প্রত্যেকের বাঁচার অধিকার আছে এবং সে অধিকার আইনের দ্বারা সংরক্ষিত । অধিকন্তু, কেউ তার বেঁচে থাকার অধিকার থেকে অন্যায় ভাবে বঞ্চিত হবেন না। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার খর্ব সংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। সুতরাং এ ধরনের হত্যাকান্ডে যারা উস্কানি দি্য়েছে এবং যারা হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছে তাদের সকলকে অবিলম্বে বিচারের আওতায় এনে অতি দ্রুত বিচার করতে হবে। তা না হলে আগামিতে দেশ আরো অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ার আশংকা রয়েছে। অন্যথায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে পুরো বাংলাদেশকে অপরাধির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।       

সমাজে সব মানুষ অপরাধ করেনা। আপরাধ করার জন্য কিছু ঘটনার অনুসংগের উদ্ভব হয়। কেউ কেউ সেই অনুসংগের শিকার হয়। তখন সে তার অজান্তেই অপরাধ করে বসে। কেউ হঠাৎ অপরাধ করে ফেলে তার  পরেই সে অনুশোচনায় পড়ে। কেউ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে অপরাধ করে। আবার কেউ অপরাধ করতে বাধ্য হয়। এই অপরাধের প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা আইনের ধারা আছে। এই ধারা অনুযাই বিচার কার্যও সম্পন্ন করা হয়। তবে এই অপরাধীদের মনোজগতের বিশেষ স্থানে আঁচড় ফেলতে পারলে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন সমাজের মধ্যে মানবিকতা গুলোকে জাগিয়ে রাখা। কিন্তু এরকম  ধৈর্যের অথচ সহজ কাজটি আমরা খুব সহজে  করতে পারিনা। একটি মানবিক সমাজ তৈরী করার চর্চা গুলো আমরা দিন দিন হারিয়ে ফেলছি। মানুষ যেন তার মানবিক গুণ গুলোকে আরো উন্নত করতে পারে এবং তা হারিয়ে ফেলতে না পারে সে অনুশীলন আমাদের প্রতিনিয়ত করে যেতে হবে।  

মাহমুদুল হক ফয়েজ  
সাংবাদিক, গবেষক
e-mail:  mhfoez@gmail.com
https://mail.google.com/mail/u/0/images/cleardot.gif

No comments:

Post a Comment

About Me

My photo
Mahmudul Huq Foez Free-lance journalist, Researcher.