Scrollwhite

মাহমুদুল হক ফয়েজ My name is Mahmudul Huq Foez, I am a journalist, leaving in a small town, named Noakhali , which is situated in coastalzila of Bangladesh

হোমপেইজ | আর্টিকেল | ছোটগল্প | ফিচার | মুক্তিযুদ্ধ | বনৌষধি | সুস্বাস্থ্য | কবিতা | যোগাযোগ

চিংড়িঘের : নোয়াখালীর উপকূলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা


চিংড়িঘের : নোয়াখালীর উপকূলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ


নোয়াখালীর দক্ষিনে সমুদ্রোপকূলে যে বিপুল ভূমি প্রকৃতির অপার কৃপায় জেগে উঠছে, সে ভূমির উপর ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহল ও গোষ্ঠীর দৃষ্টি এসে পড়েছে। লেলিহান লোভাতুর জ্বিহ্বার আগ্রাসনও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। অসহায় নি:স্ব ভূমিহীনদের বঞ্চিত করে কি ভাবে এ বিপুল ভূমি নিজেদের করায়ত্ব করা যায় তার আইনি বৈধতার পথও খুঁজে বের করার ফন্দি ফিকির করছেন অনেকে। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে এ নিয়ে উল্লম্ফন দ্রুতলয়ে শুরু হয়েছিলো। সে সময়ের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শিল্পপতি ব্যাবসায়ী আমলা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা সাংবাদিক এমন কি শহুরে ঘরের গৃহিনী ও কথিত মানবাধিকার নেতা পর্যন্ত নামে বেনামে এ ভূমির উপর হামলে পড়ে। এ বিপুল পরিমান উর্বর ভূমিতে চিংড়ি চাষ করে রফতানির মাধ্যমে দেশে কাঁড়িকাড়িঁ টাকার স্রোত বয়ে যাবে, এ রকম ধারনা দিয়ে একটি প্রকল্প স্থানীয় জনগনের প্রতিবাদের মুখেও সে সময়ের জেলা প্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক অনুমোদন করিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলো। একটি রিটের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশে তা অবশ্য তখনই বাতিল হয়ে যায়। ভূমিগ্রাসীরা তারপরও থেমে থাকেনি। যে যেভাবে পারছে সে সেভাবেই ভূমি দখলের উন্মত্ততায় মত্ত হয়ে উঠেছে। বিগত সরকার পরিবর্তনের পর মত্ততা কিছুটা স্লথ ছিলো। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক সরকার আসার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার প্রাক্কালে অনেকই আবার গোঁফে তেল দিতে শুরু করেছেন।
উপকূলের মোহনা থেকে জেগে উঠা বিশাল ভূ-খন্ডের খাসজমি ভূমিহীনদের বন্দোবস্ত পাওয়ার কথা। সুধারাম কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর, হাতিয়া, রামগতি লক্ষ্মীপুরে নদী ভাঙার ফলে মানুষ প্রতিনিয়ত ভূমিহীন হচ্ছে। আবার অনেকে বংশপরম্পরায় নি:স্ব ভূমিহীন অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। বাংলাদেশের ভূমি আইনে খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ায় প্রথম অগ্রাধিকার নিঃস্ব ভূমিহীনদের। অথচ সরকারি খাসজমি ভূমিগ্রাসী বিত্তবান প্রভাবশালী মহল করায়ত্ত করে নিচ্ছে। লাঠিয়াল, মস্তান, সন্ত্রাসী দিয়ে জোর জবরদস্তি করে খাস জমিগুলো দখল করে নিচ্ছে কতিপয় ভূমিগ্রাসী। ফঁন্দি ফিকির করছে নানান কুটকৌশলের। এর সর্বশেষ সংযোজন নোয়াখালীর উপকুলীয় চিংড়ি ঘের ঘোষনা। অনেকেই মনে করেন, এটি আইনী বৈধতার রঙ্গিন মোড়কের মশ্রিন প্রলেপ দেয়ার প্রয়াস ছাড়া আর কিছু নয়। তার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে নানান সামাজিক সমস্যা।
নোয়াখালী উপকূলের মেঘনা মোহনায় প্রাকৃতিকভাবেই পাওয়া যায় প্রচুর চিংড়ি। সেখানে আরো রয়েছে নানান জাতের প্রচুর মাছ। অথচ সে মত্স্য ভান্ডারকে আমরা উপেক্ষা করে চলেছি প্রতি নিয়ত। সে সম্পদ রক্ষা না করে আমরা পরিবেশ বিধ্বংশী কৃত্তিম চাষের কথা ভাবছি। অবাধে চিংড়িপোনা ধরারফলে সে ভান্ডারও নি:শেষ হতে চলেছে।
চিংড়ি চাষের ফলে উপকূলীয় এলাকার পরিবেশ, অর্থনীতি, কৃষি, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশুর জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হচ্ছে সেদিকে কারো কোনো লক্ষ্য নেই। ইতিমধ্যে বহু ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়েছে মানবাধিকার, বিঘ্নিত হয়েছে পরিবেশ ও প্রাণ বৈচিত্র্যের। গত কয়েক বছরে চিংড়ি ঘের নির্মাণের নামে বনবিভাগের হাজার হাজার বন কেটে উজাড় করা হয়েছে। ভূমিহীনদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণ, হত্যা খুন অপহরণ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে। এর অন্তরালে রয়েছ অর্থলোভী প্রতিপত্তিশালী মহল বিশেষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনা।

নোয়াখালীর দক্ষিণে সুধারামে জালছেঁড়া নদী দখল করে চিংড়ি ঘের নির্মাণ করার পাঁয়তারা করা হয়েছে। জালছেঁড়া নদী নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। এগুলো ওয়াপদা, ধানেরশীষ, চরক্লার্ক, চর আমানুল্লাহ, চরজুবলী, নোয়াখালী ও চরজব্বার। জেলা সদর সুধারাম থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ক্ষীণস্রোতা এই নদীটিকে নোয়াখালী খালও বলা হয়। স্থানীয় মানুষরা বলে জালছেঁড়া। বর্ষার তীব্র স্রোত জেলেদের পাতা জাল ছিঁড়ে নিয়ে যেতো বলে স্থানীয়রা এর নাম রেখেছিল ‘জালছেঁড়া’। নোয়াখালী শহরসহ সমগ্র জেলার পানি এই জালছেঁড়া নদী গড়িয়ে মেঘনার মোহনায় গিয়ে পড়ে। জেলার সমস্ত জল নিষ্কাশনের অন্যতম এ পথ নোয়াখালীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতার একটি অন্যতম অনুসঙ্গও বটে। ‘জালছেড়া’ নদীর পাশে চরক্লার্ক, চর ধানের শীষ ও চর বৈশাখীর ভাগ্যহীন ভূমিহীনদের বসবাস। এলাকার প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি এই জালছেঁড়া নদীকে গ্রাস করে বানাতে চেয়েছে চিংড়ি ঘের। তারা বাঁধ দিয়ে স্রোতম্বিনী নদীকে জলাশয়ে পরিণত করতে গিয়ে নদীর প্রবাহকে পরিবর্তন করে গভীর জোরা বা নালা কেটে ভূমিহীন কৃষকের চাষের জমিতে ঠেলে দিয়েছে। ফলে জলাবদ্ধতায় চরবৈশাখী আর চর ধানেরশীষের কৃষকদের চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে জমিতে বীজতলা করার আর উপায় নেই। সামান্য বর্ষাতেই ডুবে যায় ভূমিহীন কৃষকদের বাড়ির আঙিনা। সে আঙিনায় কৃষকরা ফলাত নানান সবজী সে আঙিনা এখন ফলনহীন হয়ে পড়েছে। অনেক ভূমিহীনের বসতভিটা জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
ভূমিহীনরা ছোট ছোট পুকুর তৈরি করে পানি ব্যবহার ছাড়াও কেউ কেউ পরিবেশ সম্মতভাবে চাষ করতো নানান জাতের মাছ। এখন সে পুকুরগুলো উপচে পড়া পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলী জমিতে। ভূমিহীন যে মানুষগুলো ভূমি বন্দোবস্ত পেয়ে ঘর বেঁধেছিলো, যারা এই পতিত ভূমিকে আবাদযোগ্য করে তুলে এক নুতন জীবনের স্বপ্ন দেখেছিলো সেই ভাগ্যহীন ভূমিহীনরা আবারো উদ্বাস্তু হতে চলেছে। প্রভাবশালীরা শুধু নদী দখল করেই ক্ষান্ত নয়, তাদের লক্ষ্য আরো সুদূর প্রসারী। বন্দোবস্ত পাওয়া ভূমিহীনদের কাছ থেকে তারা জোর জরবদস্তি করে কিনে নিচ্ছে জমি। যা সরকারের ভূমিবন্দোবস্ত আইনের পরিপন্থি। স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় ভূমিহীনরা মিথ্যা মামলায় ব্যাপারে হয়রানীর শিকার হচ্ছে। কখনো কখনো ভাড়াটে মাস্তানদের সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। জালছেঁড়া নদীর পাড়ের ভূমিহীনরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে চরম আতঙ্কগ্রস্ত সন্ত্রস্ত জীবন যাপন করছে। প্রায়ই তারা নির্যাতনের শিকার হয় প্রভাবশালীদের ভাড়াটিয়া মাস্তান বাহিনীর হাতে। ভূমিহীনদের বৌ-ঝিরা পর্যন্ত অপদস্ত হয়েছে। লাঞ্ছিত হয়েছে শারিরীকভাবে।
নোয়াখালী জেলায় এখনো চিংড়ি ঘেরের জন্য কোনো বরাদ্দ না দেওয়া হলেও সেখানে জমি দখল করে বড় বড় মাছের খামার গড়া হয়েছ। প্রভাবশালীদের এই চিংড়ি ঘের স্থাপনের উদ্যোগে এলাকার ভূমিহীন কৃষকরা উদ্বিগ্ন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভূমি প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব রাশেদ মোশাররফ এক সমাবেশে ভূমিহীনদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন; চরের উর্বর জমির একটু জায়গাও চিংড়ি চাষের নামে দেয়া যাবে না।’ সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী একই সঙ্গে স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উদ্দেশ্য বলেছিলেন, ‘মিথ্যা মামলায় ভূমিহীনরা যেন হয়রানীর শিকার না হয়।’ অথচ সরকারের এই প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হচ্ছে বার বার। প্রভাবশালীদের সন্ত্রাসী তত্পরতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ভূমিহীনরা ভূমিহীন মন্ত্রাণালয়, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। অব্যাহতভাবে তারা প্রভাবশালীদের হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ভূমিহীনরা জানিয়েছেন, নদী দখল করে চিংড়ি ঘের করা হলে শত শত একর উর্বর কৃষি জমি সম্পূর্ন বন্ধ্যা অকৃষি জমিতে পরিণত হবে। স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত পাওয়া প্রায় ৩শ’ ভূমিহীন পরিবার ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাবে। চিংড়ি চাষের ফলে এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে যাবে। গাছ-পালা মরে যাবে। চরক্লার্ক, ধানেরশীষ ও চর বৈশাখীতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে কয়েক হাজার হেক্টর কৃষি জমি চাষাবাদের অনুপযুক্ত হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে তার আলামতও লক্ষ্য করা যাছ্ছে। নোয়াখালী উপকূলে চিংড়ি ঘের নির্মাণ করা হলে স্বাভাবিক জল প্রবাহ বন্ধ হওয়াসহ চরম পরিবেশগত ও সামাজিক বিপর্যয় দেখা দেবে।

সুধারাম থানার চরজব্বর ইউনিয়নের চরবাগ্গায় নির্বিচারে চিংড়ি ঘের নির্মাণের কারণে একদিকে প্রবহমান ভুলুয়া নদী শুকিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে একই কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকছে হাজার হাজার একর ফসলী জমি। গত কয়েকবছর থেকে কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছে ফসল থেকে। লবাণাক্ততায় নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বরতা। এ থেকে সামাজিক সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। আইনও হচ্ছে লঙ্ঘিত।
বাগ্গাডোনা খালটি ভুলুয়া নদী নামে পরিচিত। এটি চাঁদপুরে মূল মেঘনা নদী থেকে এসে রায়পুর লক্ষ্মীপুর, রামগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ হয়ে নোয়াখালীর সুধারাম ও লক্ষ্মীপুরে রামগতির সীমানা বরাবর দক্ষিনে সমুদ্রে গিয়ে মিশেছে। এই নদী দিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকার বর্ষার পানি নিষ্কাশিত হয়। এই নদী ঘেঁষে কিছু প্রভাবশালী ও বিত্তবান ব্যক্তি বেশ কয়েকটি ঘের নির্মাণ করেছে। ঘেরগুলোতে এত উঁচু ও লম্বা করে বাঁধ দেয়া হয়েছে যে, এলাকার পানি যেভাবে নদীতে গড়িয়ে পড়তো এবং নিষ্কাশিত হতো, এখন তা আর হতে পারছেনা। ফলে পুরো এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। পাশাপাশি ঘেরে ব্যবহৃত লবণাক্ত ঔষধযুক্ত পানি বদ্ধ পানির সাথে এলাকার ফসলী জমিতে সৃষ্টি করছে বিষাক্ততা । মারাত্মক দূষণের ফলে চরজব্বার ইউনিয়নের অর্ধেকের বেশি উর্বর কৃষি জমি অনাবাদী ও অনুর্বর হয়ে পড়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে চর জব্বর এলাকায় ধান উত্পাদন করে কৃষকরা স্বনির্ভর ও সচ্ছল জীবন যাপন করতো, তারাই চিংড়ি ঘেরের কারণে ফসলহীনতায় পড়ে কয়েক বছরের ব্যবধানে আজ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষকই এখন গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। সরজমিন বাগ্গাডোনায় দেখা গেছে, প্রভাব শালীরা প্রবহমান ভূলুয়া খালের একটি বাঁককে দুইদিকে সম্পূর্ণ বন্ধ করে কৃষকদের জমির উপর বিকল্প খাল কেটেছে।

স্বাধীনতার পর থেকে যখন দ্রুত জমিবাড়তে থাকে তার পর থেকেই নোয়াখালী উপকূলে চিংড়ি ঘের ঘোষণা করার পাঁয়তারা চলছিলো। কিন্তু সচেতন মহলের ব্যাপক প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মুখে বিগত সরকারগুলো সে পরিকল্পনা স্থগিত করে রাখে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চিংড়ি ঘের ঘোষণার পরিকল্পনা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। সে সময় বেশ কিছু আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীনদের মাঝে ঘর ও জমি বরাদ্দ দিয়ে পুনর্বাসিত করা হয়। সে সময় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি ভূমিহীনকে পুনর্বাসিত করারও পরিকল্পনা নেয়া হয়। জমি বরাদ্দ দিয়ে প্রতিটি বাড়িকে উত্পাদনশীল খামারে পরিণত করার এক সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তার বদলে ঘোষণা করা হয় চিংড়ি ঘের। এর মাধ্যমে উত্থান ঘটেছে অভিজাত রাজনৈতিক ভুমিগ্রাসী লুটেরা শ্রেণীর

খুলনা বাগের হাট এলাকায় চিংড়ি চাষের ফলে কি ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় সে অঞ্চলে নেমে এসেছে তার ছিটেফোঁটা খবর পত্রপত্রিকা ও চ্যানেলের মাধ্যমে আমরা প্রায় পেয়ে থাকি। সরেজমিনে যাঁরা সেসব অঞ্চল দেখেছেন তাঁরা এ ভয়াবহতা সন্মন্ধে আরো সম্যক উপলব্ধি করতে পারবেন।
নোয়াখালীর উপকূল নানা প্রকার প্রাণ বৈচিত্র্যপূর্ণ অঞ্চল। চিংড়ি চাষ করলে সে বৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। জাতিসংঘের প্রাণবৈচিত্র্য কনভেনশন সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। সে কনভেনশনে প্রাণ বৈচিত্র্য রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। চিংড়ি চাষের ফলে সহজাত প্রকৃতিতে বেঁচে থাকা নানা প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যবে।
নোয়াখালীর সমগ্র উপকূলীয় এলাকায় রয়েছে বিপুল কৃষি খাস জমি। পলিমাটি বিধৌত এ জমিতে বিপুল পরিমাণ ধান উত্পাদন হয়। তাছাড়া রবি মৌসুমে ডাল, বাদামসহ তরমুজ সহ নানান রবি শস্য ও ফসল উত্পাদন হয়। সরকারি ভূমি নীতিমালা অনুযায়ী আইনগতভাবে কৃষিযোগ্য খাসজমি ভূমিহীনরা পাওয়ার অধিকার রাখে। অথচ চিংড়ি নীতিমালায় আছে যে জমিতে কোনো ফসল হয় না বা বসবাসের উপযোগী নয় সে জমিই একমাত্র চিংড়ি চাষের জন্য বিবেচনা করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে নোয়াখালীর কোনো উর্বর জমিতেই চিংড়ি ঘের করা যাবে না। জাতীয় খাদ্য ঘাটতি ও জাতীয় উত্পাদনের কথা বিবেচনা করে কোনো কৃষিযোগ্য জমিতে চিংড়ি চাষ করা যাবেনা এই বিধান চিংড়ি নীতিমালায় থাকা সত্বেও কি করে উর্বর ভূমিকে চিংড়িঘের করার পাঁয়তারা করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।



মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ


দৈনিক প্রথম আলো, ২২ আক্টোবর, ২০০৮



চিংড়িঘের

No comments:

Post a Comment

About Me

My photo
Mahmudul Huq Foez Free-lance journalist, Researcher.