Scrollwhite

মাহমুদুল হক ফয়েজ My name is Mahmudul Huq Foez, I am a journalist, leaving in a small town, named Noakhali , which is situated in coastalzila of Bangladesh

হোমপেইজ | আর্টিকেল | ছোটগল্প | ফিচার | মুক্তিযুদ্ধ | বনৌষধি | সুস্বাস্থ্য | কবিতা | যোগাযোগ

নোয়াখালী মুক্তদিবস




৭ ডিসেম্বর নোয়াখালী মুক্তদিবসের স্মৃতি
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

মহান মুক্তিযুদ্ধে অকুতভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছিলেন আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতা নিজের জীবন তুচ্ছ করে বাংলার শ্যামল প্রান্তরে রাজাকার আলবদর বাহিনীর সাথে একই ভাবে লড়ে গিয়েছিলেন তাঁরা নোয়াখালীতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি একাত্তরের ৭ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের কাছ থেকে মুক্ত করেছিলেন নোয়াখালীর জেলা সদর

২৬মার্চ যুদ্ধ শুরুর পূর্বেই নোয়াখালী বাসী স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো বস্তুত ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্সের ঐতিহাসিক ভাষনের পর পরই জেলাবাসী প্রস্তুত হতে থাকে একটি সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য বিশেষ করে ছাত্র যুবক তরুণদের মাঝে ছিলো ব্যাপক উদ্দমতা সে সময় শহর ও গ্রামের আনাচে কানাচে ছাত্র যুবকরা নিজেরাই নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তুলেছিলো স্বেচ্ছাসেবক টিম বাঁশের লাঠি দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণও শুরু হয়ে গিয়েছিলো যদিও সেগুলো সামরিক কোনো প্রশিক্ষণের আওতার মধ্যে পড়েনা কিন্তু মনের মধ্যে যে বিপুল চেতনার সম্মিলন পঞ্জিভুত হয়েছিলো তার তুলনা আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবেনা
২৬ মার্চ থেকে প্রায় এক মাস নোয়াখালী জেলা সদর হানাদার মুক্ত ছিলো সে সময় জেলার মুক্তিযোদ্ধারা সংঘটিত হবার ব্যাপক সুযোগ পায় সে সময় ফেনী, লক্ষীপুর আর নোয়াখালী মিলে ছিলো এটি জেলা ফেনী ছিলো সীমান্তবর্তী অঞ্চল জেলায় যুদ্ধের দামামা সেখানেই প্রথম শুরু হয় নোয়াখালী শহরের প্রাণ কেন্দ্র ছিলো টাউন হল জেলার রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক নানান ঘটনার নীরব স্বাক্ষী সেই টাউন হলেই প্রতিষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বা সদর দফতর সেই সদর দফতর পরিচালনা যাঁরা করেছিলেন তাঁরা আজ সবাই প্রয়াত তাঁদের মধ্যে ছিলেন জননেতা আব্দুল মালেক উকিল, সহিদ উদ্দিন এস্কেন্দার(কচি), আব্দুল মালেক(শ্রীপুর), মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন শহীদ সাহাব উদ্দিন এস্কেন্দার(ভুলু) প্রমুখ
সে সময় জেলার অগুনিত তরুণ স্বত:স্ফূর্ত ভাবে এখানে এসে মুক্তিযুদ্ধে নাম লিখিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলো আনেক আনসার আর অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর লোক তখন ফেনীতে পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করতে ট্রাকে করে এখান থেকে মুক্তি যোদ্ধারা ছুটে গিয়েছিলো ফেনীতে যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ার জন্য গ্রামবাসীরা যে যা পেরেছে রুটি চিড়া গুড় আর শুকনো খাবার নিয়ে ছুটে এসেছিলো নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে সে সময় সেগুলো ছিলো এক অভূতপূর্ব দৃশ্য
যুদ্ধ শুরুর সময় নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ছিলেন মঞ্জুরুল করিম তিনি সে সময় মুক্তিযুদ্ধাদের সর্বত্বক সহযোগীতা করেছিলেন এ জন্য পাকিস্তানীদের কাছ থেকে তাঁকে অনেক খেসারতও দিতে হয়েছিলো যুদ্ধকালীন সময় তিনি নোয়াখালী থেকে বদলী হয়ে যান এবং তাঁর পরিবর্তে জেলা প্রশাসক হয়ে আসেন খানে আলম খান জেলা মুক্ত হওয়া পর্যন্ত তিনি নোয়াখালীতেই কর্মরত ছিলেন
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় বৃহত্তর নোয়াখালীর মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন মাহ্‌মুদুর রহমান বেলায়েত মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ছাত্র যুবকদের সংঘটিত করে ভারতের দেরাদুনে গেরিলা যুদ্ধের ট্রেনিং গ্রহণ করেন আন্যদিকে সুবেদার লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে উঠে সামরিক বাহিনী থেকে আসা যুব জনতা নিয়ে গঠিত মুক্তিযোদ্ধা দল মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসে দখলদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন যুদ্ধে অনেকেই শহীদ হন সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ডাকসুর সমাজ কল্যান সম্পাদক ছিলেন অহিদুর রহমান অদু মুক্তিযুদ্ধে তিনি নোয়াখালী সদরের মুজিব বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন শত্রু মুক্ত হওয়ার মাত্র কয়দিন আগে চাপরাশির হাটে এক সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন তিনি সাহাব উদ্দিন এস্কেন্দার ভুলু পাকিস্তানীদের হাতে বন্দী হয়ে হানাদারদের অমানুষিক নির্যাতনে শহীদ হন চৌমুহনী কলেজের ছাত্র সালেহ আহমেদ মজুমদার এক সম্মুখ সমরে শহীদ হন নোয়াখালী মুক্ত হওয়ার অনেক অগেই মুক্তিযোদ্ধারা ঘিরে ফেলে নোয়াখালী শহরের চতুর্দিক শহর আক্রমনের অগে বেশ কিছু রেকি টিম অত্যন্ত গোপনে শত্রুর উপর নজরদারী করে যায় ৬ তারিখ রাতের মধ্যেই সমস্ত প্রস্তুতি শেষ হয় জেলা প্রশাসক খানে আলম খানকে শহর আক্রমন করার পরিকল্পনার কথা অগে ভাগেই অভিহিত করা হয় এ সময় রাজাকার আলবদরদের ফেলে আবার ফিরে আসার মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে পাকিস্তানী বাহিনী গোপনে কুমিল্লা কেন্টনমেন্টের দিকে পলায়ন করে হানাদারদের প্রধান ঘাঁটি ছিলো মাইজদী পিটিআই ভবন এবং সে সময়ে নির্মিতব্য সদর হাসপাতাল এ ছাড়াও আরো কয়টি ছোট ছোট ঘাঁটি ছিলো তাদের তার মধ্যে শহরের পূর্ব পাশে মাইজদী কোর্ট রেল ভবন ও নাহার বিল্ডিং ছিলো অন্যতম সে ঘাঁটি গুলোর আগেই পতন হয়েছিলো
৭ ডিসেম্বরে এলো সে মাহেন্দ্রক্ষণ ভোরের সূর্য উঠার অনেক আগেই মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের শেষ ঘাঁটি মাইজদী পিটিআই আক্রমন করে সে সময় সেখানে শুধু রাজাকার আলবদররাই অবস্থান করছিলো তাদের শেষ আশা ছিলো পকিস্তানীরা এসে তাদের উদ্ধার করবে সে ভবনটি যখন ঘিরে রাখা হয়েছিলো তখন তাদেরকে বার বার বলা হচ্ছিলো আত্মসমর্পন করার জন্য কিন্তু তারা তা কর্ণপাত না করে উৎসুক জনতার দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুঁড়তে থাকে তাদের সে গুলিতে তখন অনেক নিরিহ গ্রামবাসি নিহত ও আহত হয়েছিলেন এক পর্যায়ে আর কোনো উপায় না দেখে রাজাকার আল বদররা একে একে আত্মসমর্পন করতে করতে ভবন থেকে বের হয়ে আসে দুপুরের মধ্যেই পতন হয় শত্রুর শেষ ঘাঁটি সরকারী বেসরকারী ভবনে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা

আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের খবর নতুন প্রজন্মের কাছে প্রায় অনুপস্থিত নোয়াখালীতে যাঁরা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এ প্রজন্মের অনেকেই তাঁদেরকে চিনেন না আর যাঁরা জানতেন তাঁরাও ভুলতে বসেছেন সরকারী বেসরকারী কেউ তার কোনো উদ্যোগও নেয়নি আরো অগুনিত মুক্তিযোদ্ধদের বুকের তাজা রক্তে সিক্ত হয়ে আছে বাংলার শ্যামল প্রান্তর সারা জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক গণ কবর সেগুলোর সংরক্ষণেরও কোনো উদ্যোগ নেই
অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবার এখনো মানবেতর জীবন যাপন করছেন নোয়াখালী শহরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা সুধারাম থানার কাছেই গ্রেনেড ছুঁড়ে হানাদারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিলেন যুদ্ধের মধ্যে মাথায় গুলির আঘাত লাগায় পরবর্তীতে স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে পড়েন পথে পথে ঘুরে রোগগ্রস্ত হয়ে চিকিত্সাহীন অবস্থায় কিছুদিন পূর্বে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি সাহাব উদ্দিন এস্কেন্দার ভুলুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্বাধীনতার পর পরই নোয়াখালী ষ্টেডিয়ামের নাম করণ করা হয় 'শহীদ ভুলু ষ্টেডিয়াম’ কিন্তু নতুন প্রজন্ম এবং এই ষ্টেডিয়ামে খেলতে আসা ক্রীড়াবিদ কলাকূশলী অনেকেই জানেন না স্বাধীনতা যুদ্ধে নোয়াখালীর রাজনৈতিক ও ক্রীড়াবিদ পরিবারের সদস্য ভুলুর দেশের জন্য আত্মত্যাগের গৌরবময় ইতিহাস কাদিরপুর গ্রামের বাড়িতে তাঁর কবরটিও এখনো পাকা করা হয়নি
শুধু মোস্তফা, শহীদ আহিদুর রহমান অদু, শহীদ সালেহ আহমেদ মজুমদার, শহীদ ভুলুই নয়, মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা জেলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা আর শহীদদের সেই স্মৃতিগুলো আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে না পারলে তাঁদের ঋণ কোনোদিন শোধ করা যাবেনা

প্রথম আলো(খোলা কলম), ৭ ডিসেম্বর, ২০০৮


মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ





(TEXT)

নোয়াখালী মুক্তদিবস

No comments:

Post a Comment

About Me

My photo
Mahmudul Huq Foez Free-lance journalist, Researcher.