Scrollwhite

মাহমুদুল হক ফয়েজ My name is Mahmudul Huq Foez, I am a journalist, leaving in a small town, named Noakhali , which is situated in coastalzila of Bangladesh

হোমপেইজ | আর্টিকেল | ছোটগল্প | ফিচার | মুক্তিযুদ্ধ | বনৌষধি | সুস্বাস্থ্য | কবিতা | যোগাযোগ

নোয়াখালীর নতুন নতুন চর ও ভূমিহীন পুনর্বাসন



নোয়াখালীর নতুন নতুন চর ও ভূমিহীন পুনর্বাসন

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর দক্ষিনাঞ্চলের রয়েছে ভাঙ্গাগড়ার এক বৈচিত্রপূর্ণ ইতিহাসশত বছর ধরে মেঘনা আর সাগরে ভেঙ্গেছে লোকালয় জনপদআবার প্রকৃতির অপার মহিমায় সাগর থেকে জেগে উঠেছে হাজার হাজার নতুন ভূমিএই নতুন ভূমি যেমন জেলা তথা দেশের জন্য বয়ে এনেছিলো অপার সম্ভাবনাতেমন করে আবার এই জেগে উঠা পলিমাটিই মানুষের লাল রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বার বার

এ জমিগুলো নিয়ে চলছে দখল পাল্টা দখলের লড়াইজেগে উঠা এসব চর গুলো কৃষির জন্য খুবই উর্ব্বরউপকূলের মানুষ রক্তঘাম ঝরিয়ে এখানে উৎপাদন করছেন নানান ফসলএগুলো সরকারী খাস জমিবাংলাদেশের ভুমি নীতিমালা অনুযায়ী খাস জমি পাওয়ার অগ্রাধিকার রয়েছে ভূমিহীনদেরকিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য যে এসব খাসজমির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে উপরতলার প্রভাবশালী মহলেরনানান কায়দায় এরা গোগ্রাসে গিলে খাচেছ এসব খাস জমিএ নিয় গত ২৬ জুলাই ২০০৮ থেকে দৈনিক প্রথমআলো পর পর কয়টি সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশ করেযা সচেতন পাঠক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে

জেলার দক্ষিণে মেঘনা নদীর মোহনা, হাতিয়া নদীর তীর ও বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে সামপ্রতিককালে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে জেগে উঠছে লক্ষ লক্ষ একর নতুন ভূমিএছাড়াও সাগর মোহনায় সৃষ্টি হচ্ছে ছোট বড় অসংখ্য দ্বীপবয়ার চর, নলের চর, নাঙ্গলিয়ার চর, জাহাজ্জার চর, কেরিং চর, নিঝুম দ্বীপ, চর কমলা ইত্যাদি চরগুলোতে ইতিমধ্যে বাস করতে শুরু করেছেন অসংখ্য মানুষএদের অনেকেই mnvq-m¤^jnxb ভুখানাঙ্গা অসহায় ভূমিহীন কৃষকএই বসতির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছেসরকারের কোনোরুপ সাহায্য সহযোগীতা ছাড়া এরা উৎপাদন করছেন নানান ফসলধারনা করা হয় এখন সেখানে এক থেকে দেড় লক্ষাধিক ভূমিহীন ইতিমধ্যে বসতি স্থাপন করেছেনএদের কারোরই কোনো বৈধ কাগজ পত্র নেইপ্রশাসন, স্থানীয় জোতদার আর ভূমিদস্যুদের আতঙ্কে এরা থাকেন সদা সন্ত্রস্তস্থানীয় ভূমিদস্যুদের কাছে এরা অনেকটাই জিম্মি হয়ে আছেএ ভূমিদস্যুরাই ঠিক করে দিচ্ছে কে কতটুকু জমি পাবেনিজেরাই জমি গুলো মাপঝোঁক করে বিক্রি করছে ভূমিহীনদের কাছেতাদের কাছ থেকে এরা আবার ড়্গছর বছর চাঁদা আদায় করে নেয়আর আছে চিংড়ি মৎস্য ইত্যাদি প্রকল্প করার নামে উপরতলার কিছু ভূমিখোর লুটেরা মুৎসুদ্দি গোষ্ঠিহামলা মামলা কুটবুদ্ধিতে এরা সিদ্ধহস্তস্থানীয় প্রশাসন এমনকি রাষ্ট্রিয় নীতিনির্ধারন পর্যন্ত এদের হস্ত প্রসারিতলাঠিয়াল ভূমিদস্যুদের কাজে লাগিয়ে এরা জমি দখল নেয়আবার নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করেভূমিবানিজ্যও চলেনোয়াখালীর চরে এগুলোর রমরমা ব্যবসাএসব খবর স্থানীয় প্রশাসনের অজানা নয়পত্রপত্রিকায় মাঝে মাঝে খবর আসেভিতরের খবর বেশীর ভাগ থাকেনাযাঁরা এ খবর গুলো দেবেন, তাঁদের কেউ কেউ আবার এ সব ব্যবসা বানিজ্যের সাথে নীবিড়ভাবে জড়িতজেলার সচেতন মহলে এগুলো মুখরোচক ভাবে চলিত আছেউপকূলীয় এই খাসজমি নিয়ে কাড়াকাড়ি দীর্ঘদিনেরঅসংখ্য রক্ত ঝরেছে এই জমি নিয়ে

একাত্তরে ¯^vaxbZvi পর পরই সমুদ্র বা নদীবক্ষে নূতন চর জেগে উঠার প্রক্রিয়া Zivwš^Z করতে নেদারল্যন্ড সরকারের সহযোগীতায় ভুমি উদ্ধার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিলোজেগে উঠা চরসমূহে বনায়নের মাধ্যমে মাটির স্থায়িত্ব বৃদ্ধিকরণ এবং এসব চরকে µgvš^‡q চাষাবাদ এবং বসবাসযোগ্য ভূমিতে রূপান্তর করার উদ্দেশ্যে ষাট এর দশক হতে উপকূলীয় বনবিভাগ ব্যপক বনায়নের কার্যক্রম শুরু করে দৃষ্টিনন্দন মানবসৃষ্ট এইসব ম্যানগ্রোভ বাগান ঘূর্নিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে উপকূলবাসীর জানমাল রক্ষায় এক বিশাল সবুজ বেষ্টনী গড়ে উঠেপ্রায় এক দশক আগে হঠাৎ করে এসব বনাঞ্চল একশ্রেণীর ¯^v_v©‡š^lx মহলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে কতিপয় সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যায়জবরদখলকারী এসব সন্ত্রাসীরা নির্বিচারে গাছ কেটে, পুড়িয়ে, বনভূমিকে সাধারণ ভূমিতে পরিণত করেতিন চার বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ চরাঞ্চল জবরদখলদারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং নদীভাঙ্গনের শিকার হাতিয়া, সন্দ্বীপ, ভোলা বরিশালের হতদরিদ্র ভূমিহীনদের মাঝে সন্ত্রাসীরা এসকল জায়গা বিক্রি করতে থাকে এসমস্ত ভূমিহীন পরিবারেরা µgvš^‡q জবরদখলকৃত এসব ভূমিতে আবাদ করে ঘরবাড়ী তুলে বসবাস করতে শুরু করে অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক সত্য যে, বনবিভাগ এসব সন্ত্রাসী গ্রুপকে দমন করার জন্য কখনো কখনো পুলিশ, বিডিআর, কোষ্টগার্ড বনবিভাগ mgš^‡q ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে যৌথ অভিযান চালিয়েও সন্ত্রাসীদের দমন কিংবা উচ্ছেদ করতে পারেনি।। উপরন্তু তাদের রোষানলে প্রাণ দিতে হয়েছে বনবিভাগের একজন বিট কর্মকর্তাকে গুরুতর আহত হয়েছেন অনেক বন কর্মচারী পুলিশ তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে বনবিভাগের কয়টি বিট অফিস অনন্যপায়, আশ্রয়হীন, mnvqm¤^jnxb মানুষেরা দীর্ঘদিন এসব চরাঞ্চলে সন্ত্রাসীদের প্রজা হিসাবে বসবাস করে আসছিলো এইসব জবরদখলকারীরা নির্বিচারে বনধ্বংসের পাশাপাশি নানান অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যেতো এদের কাছে নিরীহ সাধারণ ভূমিহীন জনগণ অসহায় হয়ে পড়ে যেহেতু দূর্গম এলাকায় তাদের বসতি, সেহেতু সরকারের তরফ থেকে এদের নিরাপত্তা বিধান করাও কঠিন ছিল গত এক দশকে এসব চরাঞ্চলে কি পরিমাণ ধর্ষণ, লুট, খুন, হয়েছে তার হিসাব কষে দেখাও সম্ভব হয়নি জনশ্রুতি আছে এদেরকে মদদ দিত সেসময়ের স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা আর কিছু শিল্পপতি ২০০৩ সালের wW‡m¤^‡i বনদস্যু নিধনের নামে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ৩৯জন মানুষ অভিযোগ রয়েছে এরাই আবার দখল করে নেয় সরকারী অনেক খাসজমি

বয়ার চরে দৃশ্যতঃ রক্তাক্ততা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে এখানে চর উন্নয়ন সংস্থার সক্রিয় তত্ত্বাবধানে কিছু ভুমিহীনের পুনঃর্বাসন করা হয়েছে কিন্তু অন্যান্য চরে ভূমিদস্যুরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে গজিয়ে উঠছে নতুন নতুন বাহিনী চিংড়ি মৎস্য প্রকল্প নামে প্রভাবশালীরা জবরদখল করে নিচ্ছে হাজার হাজার একর খাস জমি এসব জমি দখলের জন্য এরা বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের ভাড়া করছে প্রভাবশালীরা সেখানে গড়ে তুলছে বিশাল বিশাল মাছের খামার অথচ এসব খাস জমিগুলো ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে পরিকল্পিত ভাবে বিতরন করলে ফসল উৎপাদনে ব্যপক ভূমিকা রাখা যেতো

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কৃষকদের জন্য একটি বাড়ি একটি খামার পদ্ধতি অনেকের কাছে খুব গ্রহণযোগ্য ছিলো একই বাড়িতে হাঁস মুরগী গবাদিপশু পুকুরে মাছ বাড়ির চতুর্দিকে ফসল ফলদবৃক্ষ শোভিত সবুজঅরন্যে ঘেরা কৃষক-বাড়িগুলো হবে এক একটি ছোট ছোট কৃষি উৎপাদনমুখী খামার সরকার পরিবর্তনের পর সে পরিকলপনাটি তিমিরেই মুখ থুবড়ে পড়ে যায়

এক সময় নোয়াখালীর উপকূলীয় চর গুলোতে গরু মহিষ ভেড়ার ছিলো অবাধ বিচরণক্ষেত্র নোয়াখালীর প্রয়াত জননেতা আব্দুল মালেক উকিল এলাকার গুরুত্ব অনুধাবন করে নোয়াখালীর চরে একটি চারণক্ষেত্র নির্ধারণ করে রেখেছিলেন যেখানে সাধারণ কৃষকদের গবাদি পশু অবাধে বিচরণ করতে পারতো কিন্তু বঙ্গবন্ধু সরকারের পতনের পর সে চারণক্ষেত্র বেদখল হয়ে যায় নোয়াখালীর চরে বিপুল ভূমি থাকা সত্তেও সাধারণ কৃষকের কথা বিবেচনা করে চারণক্ষেত্রের জন্য আর কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি

নোয়াখালীর বিস্তীর্ণ চরভূমির লক্ষ লক্ষ নিরীহ জনসাধারণের উপর থেকে দূরীভূত হয়নি জীবনের নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা, অসহায়ত্ব, দারিদ্র আর অধিকারহীনতা একটি চর বাদে বাকী সবগুলো চরে কোন আইন নেই, স্থানীয় সরকার নেই, কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই, কোন ¯^v¯’¨ কেন্দ্র নেই, স্কুল নেই হাজার হাজার শিশু পড়ালেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এসব জমিতে তাদের সরকারী মালিকানাও নেই নেই কোন নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা দুএকটি চরে কয়টি এনজিও শুধু ঋণ কর্মসূচী নিয়ে কাজ শুরু করেছে বয়ারচর ছাড়া বাকী কোন চরে চলাচলের কোন রাস্তাঘাট নেই, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নেই নিরীহ জনসাধারণের বসবাসের ঘরগুলিও খড়কুটা দিয়ে তৈরী যেকোন ছোট খাট ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাস নিমিষেই কেড়ে নিতে পারে লক্ষ লক্ষ প্রাণ এদের প্রধান জীবিকা কৃষি এবং মৎস্য শিকার কৃষিও তাদের হুমকির সম্মুখীন বেড়ীবাঁধ না থাকার কারণে অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে প্রায়ই তাদের ফসল এবং ঘরবাড়ী তলিয়ে যায় এমন পরিস্থিতিতে তারা কাজের সন্ধানে মূল ভূখন্ডে চলে আসে মানবতার ¯^v‡_©B আজ এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো জরুরী এসব সাধারণ নিরীহ ভূমিহীন পরিবারদেরকে সংগঠিত এবং সম্পৃক্ত করে তাদের মাধ্যমেই mgwš^Z উৎপাদনমূলমক কার্যক্রম গ্রহনের মাধ্যমে তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিষয়টি সদয় বিবেচনায় এনে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে ভূমি দখলদাররা যতই শক্তিশালী হোকনা কেন তাদের আগ্রাসন থামাতে না পারলে উপকূলের লোনা জল আর মানুষের লোনা রক্তে উর্ব্বর মাটি আরো একাকার হয়ে উঠবে

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক

ই-মেইল- mhfoez@gmail.com

দৈনিক প্রথম আলো, আগষ্ট, ২০০৮


BACK

No comments:

Post a Comment

About Me

My photo
Mahmudul Huq Foez Free-lance journalist, Researcher.