Scrollwhite

মাহমুদুল হক ফয়েজ My name is Mahmudul Huq Foez, I am a journalist, leaving in a small town, named Noakhali , which is situated in coastalzila of Bangladesh

হোমপেইজ | আর্টিকেল | ছোটগল্প | ফিচার | মুক্তিযুদ্ধ | বনৌষধি | সুস্বাস্থ্য | কবিতা | যোগাযোগ

কমিউনিটি রেডিওর বাস্তবতা



কমিউনিটি রেডিওর বাস্তবতা
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ


বাস্তব চিত্র:- উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী একটি দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে পরিচিত নোয়াখালী সদরের প্রায় দুই তৃতীয়াংশই চর এলাকা এখানে বাস করে সাধারন নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের অধিকাংশই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত তাছাড়াও দিনমজুর, রিক্সাশ্রমিক, জেলে প্রভৃতি পেশার মানুষ এখানে বাস করে খুব কমসংখ্যক নারি কৃষি সহ বিভিন্ন কাজ করলেও তারা মূলত ঘরকন্যার কাজ করে থাকে ঘর কেন্দ্রিক নানান কাজের সঙ্গেও এরা জড়িত

এইসব নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে শিক্ষার হার খুব কম জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতনতাও এদের তেমন নেই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এরা বেশীরভাগ সময়ে সনাতন জ্ঞান, নিজস্ব ধারনা এবং আকাশের হাবভাব দেখে বুঝতে চেষ্টা করে প্রায় ক্ষেত্রে এরা নিয়তির উপর নিজেদেরকে সমর্পন করে থাকে তবে গত কয়েক বছরের বড় ধরনের ঝড় জলোচ্ছাস ও সাম্প্রতিক সিডরের কারনে এদের ভিতর কিছুটা সচেতনতা লক্ষ করা যাচ্ছে এদের অধিকাংশের বাড়িতে রেডিও কিংবা টেলিভিশন নেই তবে তারা স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে রেডিও টেলিভিশন থেকে খবরাখবর পেয়ে থাকে
কমিউনিটি রেডিও কি: কমিউনিটি রেডিও হচ্ছে স্থানীয় একটি ছোট্ট বেতার কেন্দ্র একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে এর সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে এলাকাবাসীর অংশগ্রহণ ও তাদের জীবন কেন্দ্রিক সমস্যা ও সম্ভাবনা, চাওয়া পাওয়া ইত্যাদির উপর এর অনুষ্ঠান নির্মানে এতে গুরুত্ব দেয়া হয় সংবাদ, তথ্য বিনোদন, নাটক, জীবন্তিকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আলোচনা অর্থাৎ স্থানীয় সর্ববিষয়ে প্রচার প্রক্রিয়ায় এলাকাবাসী সরাসরি অংশগ্রহণ করে থাকে স্থানীয় যে কোনো গুরুত্ত্বপুর্ণ তথ্য সংবাদ এ কেন্দ্র থেকে স্থানীয় জনগণ পেয়ে থাকে যা কখনো জাতীয় সম্প্রচার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয় না
স্থানীয় জনগণ রেডিও টিভিকে যে ভাবে দেখে:- গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে অনেক গুলো বড় বড় ঝড় জলোচ্ছাস গর্কী সহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে গিয়েছিলো সে দুর্যোগ গুলোতে প্রচুর প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ‘৫৮.’৬০, ও ‘৭০ এর জলোচ্ছাস এ অঞ্চলে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলো সে সময় এখানকার মানুষ কোনো মাধ্যম থেকে কেনো সংবাদই পেতোনা সে সময়ের সরকার গুলোও ছিলো এব্যপারে একেবারেই উদাসীন
নোয়াখালী সদরের সর্বদক্ষিনে হাতিয়া ষ্টিমার ঘাট ও অতিসম্প্রতি বয়ার চরের দক্ষিনপার্শে সমুদ্র উপকূলে ফেরী চলাচলের জন্য চেয়ারম্যান ঘাট নামক স্থানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরিণ নৌপরিবহন সংস্থার একটি পল্টুন স্থাপিত হয়েছে এখানে হাতিয়া দ্বীপ ও নোয়াখালীর মূল ভূখন্ডের মধ্যে ফেরি যোগাযোগ রয়েছে এ এলাকায় মেঘনার মোহনায় প্রচুর সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলার ও ছোটছোট জেলে নৌকা এসে ভীড়ে থাকে এই ফেরীঘাটের সুবাদে এখানে একটি জমজমাট বাজার গড়ে উঠেছে এখানের অনেক জেলে জানিয়েছেন, তাদের অনেকেরই নিজস্ব কোনো রেডিও নেই যারা চরের কাছাকাছি থেকে সাধারনত: মাছ ধরে থাকে তারা ছোট নৌকা নিয়ে কখনো গভীর সমুদ্রে যায় না কখনো কোনো দুর্যোগ দেখলে নদীর হাবভাব বুঝে সাবধানতা অবলম্বন করে সারাদিন মাছ ধরা শেষে রাতে তারা চেয়ারম্যান ঘাটে কিংবা হাতিয়া ষ্টিমার ঘাটে আসলে লোকমুখে বিভিন্ন সংবাদ পেয়ে থাকে নদীর কূলের এ বাজার গুলোতে এখন রেডিও তেমন শুনা হয়না চা দোকান গুলোতে টেলিভিশন আছে তাই সেখানে কাষ্টমারের ভীড় লেগে থাকে যে দোকানে টেলিভিশন নেই সে দোকানে লোকজন তেমন যায় না এসব দোকান গুলোতে বেশীর ভাগ সময় নাটক ও সিনেমা বেশী দেখা হয় রেডিও টিলিভিশনকে তারা বিনোদনের মাধ্যম হিসাবেই দেখে তবে দুর্যোগকালীন সময় সংবাদ বেশী দেখা হয় এলাকার মানুষদের বদ্ধমূল ধারনা জন্মেছে যে, রেডিও টেলিভিশনে জাতীয় সংবাদ ছাড়া স্থানীয় সংবাদ প্রচারিত হয়না তাই তারা খুব প্রয়োজনীয় তথ্য ও স্থানীয় সংবাদ গুলো লোকমারফত পেয়ে থাকে তবে তা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক হয়না দুর্গম অঞ্চলের অনেক মানুষ জানিয়েছেন গত সিডরের সময় তারা লোকমুখে সংবাদ পেয়েছিলেন সাগরের অবস্থা দেখে তারা সাগর থেকে ডাঙ্গায় চলে এসেছেন, তবে অনেকে উপরে সাগরের কাছাকাছি নিজেদের ঘরেই ছিলেন অনেকেই নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি
এরকম একটি সম্প্রচার কেন্দ্র সন্মন্ধে স্থানীয় মানুষদের অনেকেরই ধারনা খুবই অস্পস্ট এব্যপারে অনেকের কোনো রকম কোনো ধারনাই নেই তবে বিষয়টি বুঝার পরে সবার মধ্যেই প্রচুর আগ্রহের সৃষ্টি হচ্ছে তাদের সকলেই মত যে এরকম একটি কেন্দ্র এলাকায় খুবই প্রয়োজন
জনগণের আকাঙ্খা:- নোয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিনে সমুদ্র উপকূলের কয়েকটি এলাকায় গণমাধ্যম বিষয়ক বেসরকারী সংস্থা ম্যাসলাইন মিডিয়াসেন্টার(এমএমসি)’র এক জরিপে দেখা যায় এখানে হাতে গোনা মাত্র ক’জনের নিজস্ব রেডিও এবং যাদের অবস্থা অপেক্ষাকৃত একটু ভালো তাদের দু’একজনের ঘরে টেলিভিশন রয়েছে তাদের অবশ্য খবর তেমন শুনা হয়না রেডিওতে গান এবং টেলিভিশনে নাটক দেখা ও গানশুনা বেশী হয় নারিদের শুধু নাটক ও গানই শোনা হয় তবে পুরুষরা মাঝে মাঝে খবর শুনে থাকে নারিদের মধ্যে খবর শুনার আগ্রহ খুব কম গত সিডরের সময় পুরুষরা ১০০ শতাংশই রেডিও কিংবা টেলিভিশনে খবর পেয়েছেন কিন্তু ১০০ শতাংশ নারি বলেছেন তারা তাদের স্বামী কিংবা লোকমারফত খবর পেয়েছেন ৮০শতাংশ বলেছেন তারা ঝড়ের পূর্বাভাষ পেয়ে নিজেদের জায়গায়ই অবস্থান করেন এর কারণ হিসাবে তাঁরা বলেন বাড়ির নিরাপত্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই যেমন সেখানে কোথাও পানি বা বাথরুমের ব্যবস্থা নেই এ নিয়ে বিশেষ করে মেয়েদের খুবই অসুবিধা পড়তে হয় তাই অনেকেই সেখানে যেতে তেমন আগ্রহী হয়না নিয়তির উপরও তারা অনেকাংশে নির্ভরশীল ১০০ শতাংশ বলেছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়কালে তাঁরা আবহাওয়ার সংবাদ শুনতে চান ১০০ শতাংশ বলেছেন তাদের অনুষ্ঠান দেখতে সবচেয়ে বেশী আগ্রহ নাটকের প্রতি তবে বাংলা সিনেমার প্রতিও তাদের আগ্রহ রয়েছে
১০০শতাংশ জানিয়েছেন, কমিউনিটি রেডিও স্থাপিত হলে শিক্ষার উপর সবচেয়ে বেশী অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার ৭০ শতাংশ জানিয়েছেন আনন্দের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দেয়া উচিত অন্য ৩০ শতাংশ জানিয়েছেন শাসন না করলে শিশুদের পড়াশুনা হয়না তবে তারা এও জানিয়েছেন এর মাত্রা যেন অতিরিক্ত না হয় এ বিষয়ে শিশুদের উপযোগী অনুষ্ঠান প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা তারা জানিয়েছেন ১০০ শতাংশ জানিয়েছেন বয়ো:সন্ধিকালীন সময়ে মেয়েদের সমস্যা বিষয়ক সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান বিশেষ ভাবে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে সবাই মনে করেন এ ব্যপারে মেয়েরা এমন কি অভিভাবকরাও এ বিষয়ে তেমন সচেতন নন এ নিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক দ্বিধা কাজ করে অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলতে লজ্জা বোধ করেন এথেকে মেয়েরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বাস্থ্য বিষয়ে ১০০শতাংশ জানিয়েছেন মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, সাধারন রোগবালাই, ডায়রিয়া, খাদ্যে পুষ্টিমান, টিকা প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা মুলক অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার তবে মাত্র এক জন এইড্‌স বিষয়ে অনুষ্ঠান করার কথা জানিয়েছেন বাসস্থান বিষয়ে ৭৫শতাংশ জানিয়েছেন, ভূমি ও ভূমির অধিকার বিষয়ে নানান অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার অবশ্য এ ব্যপারে পুরুষরাই বেশী আগ্রহী নোয়াখালীতে তাঁত শিল্পের তেমন কোনো প্রসার নেই এবিষয়ে কারো তেমন কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি তবে ১০০শতাংশই হস্তশিল্প ও নারিদের অর্থনৈতিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করার কথা বলেছেন বয়:বৃদ্ধরা জানিয়েছেন এক সময় নোয়াখালীতে প্রচুর তাঁতের প্রসার ছিলো কিন্তু কালের গর্ভে তা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে জেলার বিভিন্ন জায়গায় স্থানে স্থানে যুগীপাড়া ছিলো সেখানে লুঙ্গি গামছা শাড়ি এসব পন্য স্থানীয় ভাবে তৈরী হতো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও এগুলো বাইরের জেলা গুলোতে চালান হতো কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে পারলে সেগুলো হয়তো আবার চালু হবে আশা করা যায় এ থেকে তখন হয়তো এ এলাকার অনেক উন্নতি সাধিত হবে
১০০শতাংশ জানিয়েছেন কৃষিঋণ, সার, বীজ, উচ্চফলনশীল ধানের আবাদ, মাছ চাষ, গোবাদীপশু ও হাঁস মুরগি পালন, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়া চাষাবাদ, খাদ্যে পুষ্টিমান ইত্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করা প্রয়োজন ১০০শতাংশ জানিয়েছেন অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যম হওয়া উচিত নাটক, কথিকা, জীবন্তিকা ইত্যাদির মাধ্যমে এরা আরো জানিয়েছেন স্থানীয় ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে সবার কাছে তা গ্রহনযোগ্য হবে এছাড়াও স্থানীয় ভাষায় নাটক, গান এবং স্থানীয় সমস্যা ও সমাধান ইত্যাদি বেশী বেশী প্রচার হওয়া দরকার বলে সবাই জানিয়েছেন
উপসংহার:- সার্বিক ভাবে বলা যায় এ এলাকার জন্য কমিউনিটি রেডিওর অত্যন্ত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে দুর্গম এ অঞ্চলের মানুষ কাছের খবরটিও সঠিক ভাবে পায়না কথায় কথায এলাকাবাসী জানায়, ‘‍‍‍‍ইরাকে বোমায় মানুষ মরার খবর আমরা সাথে সাথে রেডিও টেলিভিশনে পাই কিন্তু পাশের গ্রামে মড়ক লেগে হাঁসমুরগী মারা গেলে আমরা তার খবর পাইনা‍ অথচ এটি আমাদের জন্য অধিকতর জরুরী’ এখানে এটি স্থাপিত হলে শুধু দুর্যোগকালীন সময়েই নয়, এ কেন্দ্র গ্রামীণ জনগণের সার্বক্ষনিক দিনযাপনের অনুসঙ্গ হয়ে থাকেব স্থানীয় ভাষায় স্থানীয় আঙ্গিকে স্থানীয় সমস্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে এটি জনগনের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করবে এবং অধিক গ্রহনযোগ্যতা পাবে এলাকায় সচেতনতা বাড়বে উপকৃত হবে প্রান্তিক মানুষ

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ
ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক
মোবাইল: ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail: mhfoez@gmail.com

দৈনিক প্রথম আলো, ৩০ এপ্রিল, ২০০৮



(TEXT)

কমিউনিটি রেডিওর বাস্তবতা

No comments:

Post a Comment

About Me

My photo
Mahmudul Huq Foez Free-lance journalist, Researcher.