Scrollwhite

মাহমুদুল হক ফয়েজ My name is Mahmudul Huq Foez, I am a journalist, leaving in a small town, named Noakhali , which is situated in coastalzila of Bangladesh

হোমপেইজ | আর্টিকেল | ছোটগল্প | ফিচার | মুক্তিযুদ্ধ | বনৌষধি | সুস্বাস্থ্য | কবিতা | যোগাযোগ

স্বামী-সন্তান ফিরে পাওয়ার অবিশ্বাস্য কহিনী



স্বামী-সন্তান ফিরে পাওয়ার অবিশ্বাস্য কহিনী

জহুরার ফিরে আসা

মাহমুদুল হক ফয়েজ

ঘুনাক্ষরেও কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি, বেঁচে আছেন জহুরা খাতুন। লোনা জলের হিংস্র ছোবল খেয়েও অলৌকিক ভাবে বেঁচে গেছেন জহুরা। সে এক অবিশ্বাস্য কাহিনী।
হতিয়া দ্বীপের নলচিরা গ্রামের মো:ইসমাইলের বৌ জহুরা খাতুন(৩৫)। ইসমাইল এটা ওটা কাজ করেন। সামান্য কিছু জমিও ছিলো। কিছু কিছু কৃষি কাজও করেন। চটপটে জহুরা গুছিয়ে রাখেন ঘর দুয়ার গেরাস্থালী। এরি মধ্যে ঘর আলো করে আসে সাহিদা, কোহিনূর আর ছেলে সাইফুল। সাগরের তীব্র স্রোতে ভাঙছে হতিয়া। ভাঙ্গনের মুখে জহুরাদের সে বসত বাড়ি। তখনো ভাঙ্গেনি হাতিয়ার নলচিরা। উত্তর দিক থেকে ভাঙ্গছিলো নদী,তবে তাতেও তারা ঘাবড়ায়নি। জন্মের পর থেকেই তারা দেখে আসছে নদী ভাঙ্গন আর ঝড় তুফান। সবকিছুই সীনা দিয়ে ঠেকিয়ে রাখে সাহসী মানুষেরা।
১৯৯১ সনের ২৯ এপ্রিল, এক মহাদুর্যোগের রাত। ফুলে ফেঁপে উঠেছে সাগর। দুর্যোগের আশঙ্কা দেখে সবাই গিয়ে উঠলো বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে সাইকোন সেন্টারে। ঘর গোছাতে গিয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়লেন জহুরা। একটা প্রচন্ড ঢেউ এসে কোথায় নিয়ে গেলো, জহুরার আর কিছু মনে নেই। পরদিন সকালে ঝড় যখন থামলো তখন হাতিয়ার কূলেকূলে লাশের সারি। ঘরে ঘরে কান্নার রোল। লাশ ডিঙ্গিয়ে ডিঙ্গিয়ে জহুরাকে খুঁজলেন ইসমাইল। বাবা আব্দুর রশিদের আদরের মেয়ে ছিলো জহুরা। পাগলের মত খুঁজলেন তিনিও। কোথাও পাওয়া গেলোনা তাকে। সবাই আশা ছেড়ে দিলো। মুশকিলে পড়লেন ইসমাইল। তিনটি সন্তানকে কে রাখবে! কিভাবে পালবে! আবার বিয়ে করতে বলে সবাই। কিন্তু ইসমাইলের মনের আঙ্গিনায় এক অস্বচ্ছ পর্দা এসে পড়ে বার বার। পর্দায় ভাসে চঞ্চলা চপলা একটি মুখ-জহুরা। জোর করেও সে পর্দা সরাতে পারেনি ইসমাইল। সিদ্ধান্ত নেন কোনো দিন আর বিয়ে করবেন না। ছেলেমেয়েদের দাদী-নানীর কাছে রেখে দিয়ে বদলা আর মজুরির কাজ করতে থাকেন ইসমাইল।
অন্যদিকে হাতিয়ার নলচিরা থেকে প্রায় একশ কিলোমিটার দক্ষিণে নিঝুমদ্বীপে নাটকের আরেক অঙ্কের পর্দা উঠে। ২৯ এপ্রিলের ঝড়ের রাতে সাগরের স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসে। গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া আর মানুষের লাশ। সাগরের পাড়ে জলকাদায় বিক্ষিপ্ত পড়েছিল সেগুলো। সে লশের মিছিলে নড়ে চড়ে উঠে একটি মানুষ। বালি আর শেওলায় জড়ানো লম্বা চুল। সূর্যের আলো পড়ে গরম হয়ে উঠে নাকের নোলক। নাক মুখ থেকে বেরিয়ে আসে বালু ভর্তি লোনা জল। চোখ মেলে তাকায় মানুষটা। এদিক ওদিক পড়ে আছে লাশ। তিনিও শক্তিহীন প্রায় অসাড়। কিছুই বুঝতে পারেন না। তবুও অসম্ভব শক্তি নিয়ে উঠে বসে। শরীরে তার একটুকরোও কাপড় নেই, আশে পাশেও কিছুনেই। লতাগুল্ম দিয়ে কোনো রকমে শরীর ঢাকেন। কিন্তু কিছুই স্মরণ করতে পারেননা। শুধু আসেপাশের লাশ দেখে লাশ দেখে বুঝতে পারেন ভয়ঙ্কর কিছু একটা হয়েছে। নিজেকেও চিনতে পারছেন না। আশ্চর্য, পূর্ব পরিচয় কিছুই তার মনে নেই। সে অবসাথায় দ্বীপের ক’জন মানুষ তাকে উদ্ধার করে। একটি কাপড় পরিয়ে তাকে নিয়ে আসে এলাকার কালাম চেয়াম্যানের কাছে। চেযারম্যান তার চিকিৎসা করান। কিন্তু আগের কিছুই আর মনে নেই তার। কোথায় ঘর কি নাম কে বাবা মা বিয়ে হয়েছিলো কিনা। কিছুইনা। কালাম চেয়ারম্যানকে বাবা বলে ডাকেন। অনেকেই তাকে বিয়ে করতে চান। কালাম চেয়ারম্যানও ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিতে চান। কিন্তু তাতে তার সায় নেই। মাঝে মাঝে আনমনা হয়ে যান, মনের গভীরে অনুভব করেন, এক অদৃশ্য সুতায় কেউ যেন টান দেয় বারে বারে। সে অনুভূতি কাউকে বুঝাতে পারেন না। সে অদৃশ্য সুতার বন্ধনের উৎসও বুঝতে পারেন না। খুঁজে পাননা। কিন্তু এমন করে তো যেতে পারে না দিন। নিঝুম দ্বীপের একদল নারী চুড়ি শাড়ি ফেরী করে বিক্রি করে। জহুরাও এই ফেরিওয়ালাদের সাথে ফেরী করা শুরু করে। চোট্ট দ্বীপ। এ বাড়ি ও বাড়ি, এঘাট থেকে ও ঘাটে। দিন কেটে যায়।
এভাবে কেটে গেছে প্রায় চার বছর। নিঝুমদ্বীপে টেষ্ট রিলিফের রাস্তায় কাজ করতে আসে হাতিয়ার ক’জন মাটিয়াল। সেই মাটিয়ালদের কয়জন ইসমাইল আর জহুরার খাতুনের পরিচিত ছিলো। তারা অবাক। একদল ফেরীওয়ালার সাথে মাথায় ঝাঁপি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে জহুরা খাতুন। কিন্তু ওদের চিনতে পারেনা জহুরা। ওরা জহুরা খাতুনকে সব স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু ওর যে কিছুই মনে নেই। ফিরে গিয়ে লোকজন স্বামী ইসমাইল ও বাবা আব্দুর রশিদকে জহুরার জহুরার বেঁচে থাকার কথা বলে। ওরা ছুটে আসে নিঝুম দ্বীপে। স্বামী আর বাবাকে দেখে আবার সব কিছু মনে পড়ে। জহুরা বুঝতে পারেন এতদিন স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছিল তার। এতদিনে তিনি খুঁজে পান স্বামী-সন্তান। এ সময়ের মধ্যে সাগরে ভেঙ্গে যায় ইসমাইলের ঘরবাড়ি সব। নিঃস্ব হয়ে পড়ে ইসমাইল। কালাম চেয়ারম্যান নিঝুমদ্বীপে একটি ঘর ভিটির ব্যাবস্থা করে দেন। আবার ছেলেমেয়ে আর স্বামী সংসার ফিরে পান জহুরা খতুন। এখন নিঝুমদ্বীপে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেনে তারা।




স্বামী-সন্তান ফিরে পাওয়ার অবিশ্বাস্য কহিনী

No comments:

Post a Comment

About Me

My photo
Mahmudul Huq Foez Free-lance journalist, Researcher.