Scrollwhite

মাহমুদুল হক ফয়েজ My name is Mahmudul Huq Foez, I am a journalist, leaving in a small town, named Noakhali , which is situated in coastalzila of Bangladesh

হোমপেইজ | আর্টিকেল | ছোটগল্প | ফিচার | মুক্তিযুদ্ধ | বনৌষধি | সুস্বাস্থ্য | কবিতা | যোগাযোগ

নোয়াখালীর চাটাই শিল্প




নোয়াখালীর চাটাই শিল্প
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

প্রসঙ্গ কথা
নোয়াখালী জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের নির্দিষ্ট কিছু এলাকার নারীরা চাটাই শিল্পের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত রয়েছে। বিশেষ করে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের সুধারাম থানার সাহেবের হাট, চরমটুয়া, খলিফার হাট, এওজবালিয়া, ইসলামগঞ্জসহ এক ব্যাপক এলাকায় এগুলো তৈরী হয়।


নিম্ন আয়ের দরিদ্র প্রতিটি ঘরে ঘরেই নারীরা এই শিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। উপকূলীয় পলিমাটি সমৃদ্ধ এই এলাকায় চাটাই পাতা প্রচুর উৎপন্ন হয়। কোন রকম চাষাবাদ ছাড়াই নীচু জমিতে এই পাতার গাছ আপনাতেই জন্মে। স্থানীয় ভাষায় এটি হোগলা নামেই পরিচিত। হোগলা পাতা দিয়ে সাধারণতঃ চাটাই বা বিছানা তৈরী হয়। এই চাটাই নিম্ন আয়ের জনগণ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ বিছানা হিসেবে ব্যবহার করে। তাছাড়া ঘরের ছাউনী, বেড়া ও ফসল রাখার টুকরী বানানোর জন্যও এই পাতা ব্যবহার করা হয়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ শিল্পও বটে। হোগলা পাতা দিয়ে চাটাই তৈরীর কাজ প্রধানতঃ নারীরাই করে থাকে। নোয়াখালীর এই অঞ্চল থেকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার চাটাই তৈরী হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানী হয়। সিলেট, ব্রাক্ষ্মনবাড়ীয়া, রংপুর, ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের উত্তরাংশে বছরে কয়েক কোটি টাকার চাটাই চালান হয়। সে সব অঞ্চলে এর ব্যাপক বাজার রয়েছে। আনুমানিক চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার নারী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রতিদিন নিরলস ভাবে চাটাই তৈরী করে থাকে। কিন্তু মধ্যস্বত্ব ভোগী দালাল, ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা নারীদের এই অক্লান্ত শ্রমকে জিম্মি করে রেখেছে। তাদের শ্রমের কোন মূল্য দেয়া হয় না। নানান কৌশলে নাম মাত্র মূল্যে ফড়িয়ারা নারীদের কাছ থেকে চাটাই কিনে নেয়। ফলে উৎপাদনকারী বিপুল সংখ্যক নারীরা তাদের শ্রম মূল্য পায় না । এই নারীদের অধিকাংশই সম্পূর্ণ নিরক্ষর। এর ফলে একদিকে যেমন এই সম্ভাবনাময় শিল্পটি দিন দিন ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে অন্যদিকে এই নারীদেরও জীবনের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

চাটাই সাধারণতঃ নিম্ন আয়ের মানুষ বেশী ব্যবহার করে। দামেও এটি অপেক্ষাকৃত কম। তাই একে গরিবের বিছানা নামে অনেকেই অবহিত করেন। বিভিন্ন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এ শিল্পটির বিপুল সম্ভাবনার ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এর কোনে প্রসার ঘটেনি।

নোয়াখালীর এ গ্রামগুলো হোগলা শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু। এখানে পর্যায়ক্রমে এ শিল্পটি বিকাশ লাভ করেছে। এক সময় মেঘনার মোহনায় এই এলাকা গুলো ভেঙ্গে গেলে পলিমাটি সমৃদ্ধ পয়স্তি নীচু জমিতে হোগলা গাছ উৎপন্ন হয়েছে। সাধারনতঃ নতুন জেগে উঠা জমিতে প্রকৃতিকভাবেই এ গাছ বংশ বিস্তার করে। এলাকার মানুষ প্রায় বিনা শ্রমেই এগুলো পেয়ে থাকে। যার কারণে ঐ এলাকায় হোগলা পাতা দিয়ে তৈরী চাটাই শিল্প প্রসার লাভ করেছে। এ পেশায় সাধারনতঃ ঐ এলাকার নারীরাই জড়িত। এ শিল্পটি নারী শ্রমিকদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। এ এলাকায় এমন কোন বাড়ী পাওয়া যাবেনা যেখানে নারীরা একাজে নেই। এই নারীরা অসম্ভব পরিশ্রমী ও নিবেদিত প্রাণ। শ্রমজীবি গ্রামীণ এ নারীরা অবদান রাখছে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে। এটি একটি চলমান শিল্প এবং ক্ষয়িষ্ণুও নয়। কিন্তু এর পেছনের সুদক্ষ কারিগর নারীরা রয়ে গেছে বঞ্চিত শোষিত ও ঋণগ্রস্থু হয়ে। দিনরাত অমানুষিক পরিশ্রম করেও এরা এদের অভাব ঘুচাতে পারেনি


নোয়াখালী জেলার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক দরিদ্র নারীরা চাটাই শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। যুগ যুগ ধরে এ শিল্পের সাথে জড়িত থেকেও তারা তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পারেনি। অনেক নারী ঋণের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ঋণ এবং অনুদান সর্বদা এদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এই দরিদ্র নারীদের আর্থ-সামাজিক জীবন ক্ষুদ্র গন্ডির মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে আছে। দিন ও রাত তাদের জীবন একই চক্রের মধ্যে ঘূর্ণিয়মান হচ্ছে। এ নারীরা অসম্ভব পরিশ্রমী ও নিবেদিত প্রাণ। শ্রমজীবী এ গ্রামীণ নারীরা অবদান রাখছেন দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে। অথচ এ শিল্পটি ক্ষয়িষ্ণুও নয়। এর পিছনের কারিগর নারীরা রয়ে গেছে বঞ্চিত শোষিত ঋণগ্রস্থ হয়ে। তাদের জীবনে কোন বিনোদন নেই, খুব স্বপ্নচারীও তারা নয়। শুধু আকুতি রয়েছে একটু বেঁচে থাকার এদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকারী বেসরকারী কোন পর্যায়ে থেকেই এ যাবত কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। চিন্তা চেতনার দিক দিয়েও এরা এক বৈচিত্র্যহীন জীবনের ঘানি টেনে যাচ্ছে। অথচ এ নারীদের মধ্যেই নিহিত রয়েছে অসাধারণ এক সম্ভাবনার পথ।

চাটাই পাতা বা হোগলা পাতা

যে গাছের পাতা দিয়ে চাটাই তৈরী করা হয়, স্থানীয় ভাষায় একে হোগলা পাতা বলা হয়। এটি তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ। উপকূলীয় পলিমাটিতে এ গাছটি আপনাতেই জন্মে। এ গাছটি লম্বায় ১২ থেকে ১৫ ফুট হয়ে থাকে। নোয়াখালীতে প্রায় ৩২৫ হেক্টর জমিতে হোগলা পাতার চাষ হয়। প্রায় এক ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ত্রিকোণাকৃতি মাংসল পাতা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ পাতা দিয়ে চাটাই বা বিছানা তৈরী করলে বিছানাটি নরম ও আরামপ্রদ হয়। নিম্নবিত্ত ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ এটি ব্যবহার করে। তাছাড়াও দড়ি, ঘর তৈরী, বেড়া, তাজা ফল মূল বা কোন কিছু পরিবহনের জন্য টুকরী বানিয়ে এর ব্যাপক ব্যবহার হয়। এটি ১০০% পরিবেশ সম্মত। ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে সারা বছরই এটি জন্মে। গবেষণা প্রকল্প এলাকার প্রতিটি গ্রামেই হোগলা পাতার বন পরিদৃষ্ট হয়।

বাজার ব্যবস্থাপনা :

হোগলা পাতা দিয়ে উৎপাদিত পণ্য বিশেষ করে আভ্যন্তরীণ বাজারেই সরবরাহ করা হয়। নোয়াখালীর কয়টি গ্রামীণ বাজার এ পণ্যের জন্য বিখ্যাত। প্রতি সপ্তাহে লক্ষ লক্ষ টাকার পণ্য এখানে বেচা কেনা হয়। এখান থেকে ব্যবসায়ীরা সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে। বিদেশের বাজারে হোগলা পাতা দিয়ে তৈরী উচ্চমানের হস্তশিল্প তৈরী করে দু’একটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানী করছে। বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এর প্রসার এখনো তেমন ঘটেনি। স্থানীয়ভাবে ফড়িয়ারা এর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। গ্রামীণ নারীদের কাছ থেকে খুবই অল্প দামে কিনে এরা অধিক মুনাফায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে। এর জন্য গড়ে উঠেছে একটি ফড়িয়া চক্র। চাটাই শিল্পের নারীদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এ চক্রটি মুনাফা লুফে নিচ্ছে।

অমিত সম্ভাবনা

হোগলা পাতার এ শিল্পটির রয়েছে এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা। এ থেকে পরিবেশ সম্মত পণ্য উৎপাদন হয় বিধায় এর ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। তবে প্রচারের অভাবে এটি তেমন বিকাশ লাভ করেনি। ছোট বিছানা, নামাজের মাদুর, কুশন, ঝুড়ি, টুপি, ছোট ব্যাগ, টুকরী, ঘরের নানান ধরণের ওয়ালম্যাট, এল্টিক্স, হাত পাখা ইত্যাদি নানান পণ্য এ থেকে উৎপাদিত হতে পারে। বিদেশেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

তথ্য গ্রহনের স্থান :

নোয়াখালী জেলার সদর থানার দক্ষিণাঞ্চলের এওজবালিয়া, কালাদরাপ, চরমটুয়া ইউনিয়নের কয়টি গ্রাম থেকে সরাসরি তথ্য নেয়া হয়েছে। নোয়াখালী শহর থেকে এ স্থানগুলো ১৫ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ সব স্থানগুলো ঘন বসতিপূর্ণ নীবিড় নিভৃত গ্রাম। শহর থেকে এ গ্রামগুলোতে যোগাযোগের ব্যবস্থা মোটামুটি ভাল। যাতায়াতের জন্য রিক্সা, টেম্পু, টেক্সি ইত্যাদি রয়েছে। এলাকাটি মূলতঃ কৃষি প্রধান। এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। ধান এখানকার প্রধান কৃষি পণ্য। মৌসুমে এখানে প্রচুর শাক সব্জী উৎপন্ন হয়। গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হোগলা পাতার বন।

যেভাবে তথ্য নেয়া হয়েছে :

সম্পূর্ণ অংশগ্রহণমূলক কর্ম গবেষণার পদ্ধতিতে তথ্য নেয়া হয়েছে। এর জন্য নোয়াখালীর সদর উপজেলার নির্দিষ্ট অঞ্চলের পাঁচটি এলাকার নারীরা তথ্যগুলো প্রদান করেছে।

স্থানগুলো হলোঃ-

১. জুম্মারাগো বাড়ী,
কালাদরাপ ইউনিয়ন,
রাহামুড়ী তালুক গ্রাম।

২. দপ্তরী বাড়ী,
পূর্ব এওজবালিয়া ইউনিয়ন,
সাহেবের হাট।

৩. রুহুল আমিনের বাড়ী,
বরাইপুর গ্রাম ,
কালাদরাপ ইউনিয়ন ।

৪. আবুল খায়ের মিয়ার বাড়ী,
পূর্ব এওজবালিয়া,
শান্তিনগর গ্রাম।

৫. আকরাম খাঁ মেম্বার বাড়ী,
এওজবালিয়া গ্রাম।

তথ্য গ্রহণকালে নারিদের কাছ থেকে তাদের চিন্তা চেতনার বিষয়ে আরো কিছু ধারণা পাওয়া যায়।

তারা যে চিন্তাগুলো ধারণ করে আছে

 নারীরা খুবই সীমিত গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ।
 পুরুষরাই শ্রেষ্ঠ। নারীদের উপর কর্তৃত্ব করার অধিকার রয়েছে পুরুষদের।
 নারীদের সৃষ্টি হয়েছে পুরুষদের সেবা দাসী হিসাবে।
 পুরুষের বাম পাঁজড় থেকে নারীর সৃষ্টি।
 রান্না বান্না ঘর সংসারের কাজ করবে নারীরা।
 পুরুষ এবং নারী উভয়ে ভিন্ন ভিন্ন জাত।
 পুরুষের পায়ের নীচে নারীর বেহেস্ত। স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেস্ত।

অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষণ :

 এলাকার ৮০% নারীরা চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত।
 চাটাই বিক্রির টাকা এরা স্বামীদের হাতে তুলে দেয়।
 ৯৫% পরিবার খুবই নিম্ন আয়ের।
 উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পায় না।
 ৬০% নারী কোন না কোন ভাবে ঋণগ্রস্থ।
 সিলেট, রংপুর, চট্টগ্রাম ইত্যাদি অঞ্চলে চাটাইয়ের প্রচুর চাহিদ রয়েছে।

সামাজিক পরিবেশ, স্বাস্থ্য :

 ৯৮% পরিবার খোলা পায়খানা ব্যবহার করে।
 ১০০% পরিবার পুকুর ব্যবহার করে।
 কবিরাজ, হাতুড়ে ডাক্তার, গ্রাম ডাক্তার, তাবিজ তুমার ইত্যাদির উপর ভরসা করে।
 নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা নেই। শিক্ষার হার খুবই কম।

চাটাই তৈরী :

 চাটাই তৈরীতে নারীরা বিভিন্ন সময় নির্ধারণ করে থাকে।
 রাত্রীতে চাঁদের আলোতে চাটাই তৈরী হয়।
 ভোরের কুয়াশা, ভেজা আবহাওয়ায়, ছায়াযুক্ত মাটিতে নারীরা চাটাই তৈরী করে।
 বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে চাটাই তৈরীর হাতে খড়ি হয়।
 চাটাই ছাড়া অন্য কোন পণ্য তৈরী করেনা।
 ফড়িয়ারা চাটাইয়ের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।
 কুটির শিল্পের কোন প্রশিক্ষণ এরা পায়নি।
 প্রশিক্ষণ পেলে অনেক নতুন বৈচিত্র্যময় পণ্য তৈরী করা সম্ভব, যা দেশে ও বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

সুখ যন্ত্রণার অনুকাব্য :

বৈচিত্র্যহীন জীবনের ক্ষুদ্র গন্ডির মধ্যে বসবাস করলেও প্রাণের স্বপ্নিল কষ্ট যন্ত্রণাগুলো কাজের ছন্দে ছন্দে মাঝে মাঝে ধরা দেয়। শিক্ষাদীক্ষাহীন গ্রাম্য নারীদের কন্ঠ থেকে আপনাতে উচ্চারিত হয় ওদের জীবনের নানান অনুসঙ্গ। বিছানা বা চাটাই নিয়ে প্রসঙ্গ কাব্য।
বিছানা দিলাম যেমন তেমন
বালিশ দিমু না
দমকার বিছানা
বিছাই দিলে বেজার হইও না।

নানান প্রতিকূলতার মাঝেও চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত নারীরা নিত্য স্মরণ করে তার সৃষ্টিকর্তাকে। সকল আপদে বিপদে সৃষ্টিকর্তাই একমাত্র ভরসা।
মাছে করে পানির আশা
পঙ্খী করে ডালের আশা।
আমি করি কিসের আশা?
আমি করি মাওলার আশা।

সোহাগ ভালবাসা রাগ অনুরাগে নিজের পছন্দের মানুষকে আগলে রাখে। তার জন্য সব কিছু উজাড় করে দেয়।
যার লাই যার হরান কান্দে
উদার করি ভাত রান্দে।
আর্থাত্ আপন মানুষের জন্যই বিরহীর প্রাণ ব্যকুল হয়, সে ভালোবাসার মানুষের জন্য সব কিছুই উজাড় করে দিতে কেউ কুন্ঠাবোধ করেনা।

ঋণ গ্রহণ করতে নারীদের পড়তে হয় নানান বিড়ম্বনার মধ্যে। এছাড়াও অযাচিত ঋণের কুফল সম্পর্কেও ওদের অজানা নয়। দুর্ভোগের কথা কাব্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়-

হাঁইটতে হাঁইটতে নালা
খাইতে খাইতে গলা।

বর্ষাকালে মাটি জায়গা মত থাকেনা। ধুয়ে চলে যায়। মানুষের আশাগুলোও বিলীন হয়ে যায়।

আল্লা নেয় তোড়ে
বান্দার আশা গড়ে (নালা নর্দমা)।


প্রয়োজনের সময় সকল অনুভূতি বিসর্জন দিতে হয় তাদের

গিন (ঘৃণা) হালাইছি গড়ে (নালা নর্দমা)
ভাত হালাইছি নড়ে (নাড়ীতে)।

প্রিয় মানুষ প্রিয় মুখ যখন দূরে চলে যায়। চলে যায় মনের আড়ালে। হঠাৎ করে যখন এসে কখনো দেখা দেয়, অভিযোগের সুরে বলেন-

দিন গেল কাল গেলো
উক্কুৎ (হঠাৎ) করি মনে পড়লো।

সরণি-২ : জেলা- নোয়াখালী, উপজেলা- সদর।

ইউনিয়ন গ্রামের নাম বাড়ীর নাম অংশগ্রহণকারী পরিবারের সংখ্যা
নারীরসংখ্যা
এওজবালিয়া আকরাম খাঁ
মেম্বারের বাড়ী ৩০জন ২২টি

৭নং এওজবালিয়া পূর্ব এওজবালিয়া হাবিল খান
দপ্তরী বাড়ী ২৫জন ১০টি

৭নং এওজবালিয়া শান্তিনগর আবুল খায়ের
মিয়ার বাড়ী ২৫জন ১৬টি

৮নং কালাদরাপ রাহামুড়ী তালুক দাঁড়ী ব্যাপারী
জুম্মারাগো বাড়ী ৩০জন ১৩টি

৮নং কালাদরাপ পশ্চিম বারাহীপুর রুহুল আমিনের বাড়ী
(আরাফাত চাটাই প্রকল্প) ২৫জন ১০টি

যেসব নারীরা চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত :

গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিম্নবিত্ত পরিবারের একদল তৃণমূল নারী মূলতঃ এ চাটাই শিল্পের ধারক ও বাহক। দৈনন্দিন জীবনের বেঁচে যাওয়া সময়টুকুকে তারা ব্যয় করেন চাটাই বুননের কাজে। চাটাই তৈরীর কাজ তাদের জন্য খুব একটা কঠিন না হলেও বেশ পরিশ্রমের ও সময় সাপেক্ষ। এ সব নারীরা ঘর সংসার সামলানোর পরেও পরিবারের বাড়তি কিছু রোজগারের প্রত্যাশায় হোগলা পাতাকে নান্দনিক রূপ দিয়ে তৈরী করেন চাটাই শিল্প। এখানকার নারীরা তাদে পূর্ব পুরুষ থেকে প্রাপ্ত পেশাটিকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। কোনো রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই তারা কাজগুলো শিখেছেন বংশ পরম্পরায়।

চাটাই শিল্পীদের আর্থসামাজিক অবস্থা :

চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত নারীরা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত। অনেকের নূন আনতে পান্তা ফুরায়। একটি মানুষের বেঁচে থাকার যে পাঁচটি মৌলিক অধিকার রয়েছে তা আদৌ এদের জীবনে অর্জিত হচ্ছে কি কিনা এ নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথাও নেই। এদের বেশীর ভাগই অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। বঞ্চিত স্বাস্থ্য সেবা থেকে। নানা রকম কুসংস্কার ও নিজস্ব ধ্যান-ধারণাকে মনের মাঝে পোষণ করে আছেন এরা। তাদের কথায় বোঝা যায় উপযুক্ত শিক্ষা পেলে এরা নিজেদেরকে নুতন ভাবে আবিষ্কার করার সুযোগ পাবেন।

শিক্ষা ব্যবস্থা :



এক সময় নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে এরা রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করলেও বর্তমান যুগের বিবর্তনের এ কালকে তারা অস্বীকার করছে না। কিন্তু দারিদ্র এদের শিক্ষার সু-কোমল বৃত্তিকে দাবিয়ে রেখেছে। তবে এ বিষয়ে তাদের ইচ্ছা শক্তিরও বিকাশ ঘটেনি। আবার কেউ কেউ অভাবের দোহাইকে প্রশ্রয় না দিয়ে তাদের ছেলে মেয়েদেরকে ক্রমশ: স্কুলগামী করে তুলেছে। তারা বুঝতে শিখেছে শুধু অর্থ নয় ভাগ্য উন্নয়নের জন্য শিক্ষারও প্রয়োজন রয়েছে।

চিকিৎসা / স্বাস্থ্য সেবা :

এ এলাকার নারীদের অনেকেরই পুষ্টিহীনতায় ভরা জীর্ণশীর্ণ দেহ। অনেকেই ভুগছেন নানা রোগ শোকে। এর কারণ হিসাবে তারা তাদের নিত্য দিনের অভাব অনটনকে দায়ী করেছেন। দারিদ্র তাদেরকে যেমনি আবদ্ধ করে রেখেছে তেমনি আবদ্ধ করেছে রোগ বালাই। এখানকার এ জনগোষ্ঠীর জন্য এখানে নেই কোন চিকিৎসা কেন্দ্র। রোগ বালাই হলে তাদেরকে হতে হয় শহরমূখী। কিন্তু স্বল্প আয়ের এ মানুষগুলোর পে শহরে এসে ব্যয় বহুল চিকিৎসা গ্রহণ করা কোন রকম সম্ভব নয়। এ অবস্থায় তারা শরণাপন্ন হয় সনাতনী চিকিৎসা ব্যবস্থার। অর্থাৎ বাধ্য হয়ে তাদেরকে নির্ভর করতে হয় ঝাড় ফুঁক সহ নানা রকম কবিরাজি চিকিৎসায়। এ প্রসঙ্গে আলোচনা কালে এখানকার বয়স্ক জনেরা মনে করেন তাদের সময় চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকলেও এখনকার প্রজন্মের জন্য এখানে চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে উঠা খুবই জরুরী। বিয়ের পর থেকে সোমেনা খাতুন (৬০) চাটাই তৈরী করে আসছেন, বলেন, ‘‘বাবারে আঙ্গো দিন তো হারই গেছে অনগার হোলাহাইনের লাইতো এক্কান ডাক্তারখানা দরকার।’’ (বাবা, আমাদের দিন তো পার হোয়ে গেছে এখনকার ছেলে মেয়েদের জন্যতো একটা ডাক্তারখানা দরকার)

চাটাই শিল্পের নারীদের নিজেদের সম্পর্কে ধারণা

 আমরা সবাই চাটাই বানাতে পারি।
 বাচ্চা লালন পালন, নামায কালাম পড়া।
 গান গাওয়া, বিয়ের গান গাওয়া ইত্যাদিতে অভিজ্ঞ।
 সেলাই করতে পারি।
 নাচতে জানি।
 কুটির শিল্পের কাজ জানি।

সরণি-৪: পুরুষদের সম্পর্কে নারীদের ধারণা :

 পুরুষ উপার্জন করে।
 বাজার করে
 শক্তি বেশি।
 সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
 সংসারের ভালোমন্দ দেখে।
 সন্তান জন্মদানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, বাবা হয়।
হোগলা পাতার চাষ পদ্ধতি :

এ অঞ্চলে কবে কখন হোগলা পাতার উৎপত্তি হয় তার কোন সঠিক তথ্য স্থানীয় জনগণ জানাতে পারেনি। এ সম্পর্কিত কোন তথ্য স্থানীয় কৃষি বিভাগও জানাতে পারেনি। হোগলা পাতা এক ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট দশ বার ফুট লম্বা, চির সবুজ তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘টাইফা ইলিফান্টেনা’ (Typha Elephantena).

প্রাকৃতিকভাবে এ হোগলা পাতার বন গড়ে উঠেছে। সাগর থেকে এক সময় চর জেগে উঠে। চরগুলো তখনো থাকে নীচু। এ অবস্থায় জোয়ারের পানিতে ভেসে আসে হোগলার বীজ। এ ভাবে নতুন হোগলার ঝাড় সৃষ্টির মাধ্যমে এ বনের উৎপত্তি হয়েছে। নদী বা খালের পাড়ে এবং পলিমাটি সমৃদ্ধ ভেজা মাটিতে হোগলা গাছ আপনাতেই জন্মায়। হোগলা পাতা দেখতে অনেকটা ত্রিকোণাকৃতির। পাতা উৎপাদনের জন্য কোন সেচ ব্যবস্থা নিড়ানী আগাছা দমন বা কীট নাশকের প্রয়োগের প্রয়োজন হয়না। এর বংশ বৃদ্ধি সাধারণতঃ বীজ বা গাছের মূলের সাহায্যে হয়ে থাকে।
হোগলা পাতা সাধারণতঃ কার্তিক অগ্রাহায়ন মাসে কাটা হয়। কাটার পর পাতাগুলো রোদে শুকিয়ে চাটাই বুননের উপযোগী করে তোলা হয়। হোগলা পাতা সাধারণতঃ দুই প্রকারের।

১. আউশ পাতা।
২. শাইল পাতা।
রোদে শুকানোর পর পাতাগুলো হলুদ আকার ধারণ করে। কার্তিক অগ্রহায়ন মাস ছাড়াও আষাঢ় শ্রাবণ মাসে একবার পাতাগুলো কাটা হয় যাতে অকেজো পাতাগুলো বাদ হয়ে নতুন পাতা গজায়।

প্রক্রিয়াজাতকরণ :
রোদে শুকানোর পর পাতাগুলোকে ধারালো ছুরি দিয়ে লম্বালম্বী ভাবে দুইভাগ করা হয়। দুইটি অংশ দিয়ে চাটাই তৈরী করা যায়। মাঝখান থেকে চিকন সুতার ন্যায় একটি আবরণ বের করা হয়। যা দিয়ে সিকা, দড়ি ইত্যাদি তৈরী করা যায়।

উৎপাদিত পণ্য :

হোগলা পাতা দিয়ে চাটাই তৈরীর পাশাপাশি হাত পাখা, ঝুড়ি, সিকা, বিড়া (স্থানীয় ভাষায় হোঁচ্ছা) দড়ি, টুকরি, পানের বাটা ইত্যাদি গৃহস্থালির ব্যবহার্য্য পণ্য তৈরী করা হয়।

ব্যবহার বিধি :

হোগলা পাতার চাটাই মুসলমানদের মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসা, বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কোরবানের পশু জবাই করার পর মাংস কাটার কাজে ব্যবহার করা হয়। ব্যবহার করা হয় মৃত ব্যক্তির দেহ মোড়ানোর কাজে। শুধু যে মুসলমানরা ব্যবহার করে তা নয়, বিভিন্ন মন্দির ও গীর্জায় হোগলা পাতার চাটাই ব্যবহার করা হয়। তাছাড়াও নতুন দালান নির্মাণের এবং ছাদ ঢালাইয়ের সময় ব্যবহার করা হয়। ঘরের শোভা বর্ধনের লক্ষে বিভিন্ন নকশা খচিত করে চাটাই ব্যবহার করা হয়। গ্রামাঞ্চলে উননের(চুলা) ধোঁয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঘরের দমদমা (সিলিং) হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো সকল ধর্মের মানুষ লাশ পরিবহনের জন্য চাটাই ব্যবহার করে থাকে। মর্গে লাশের ময়না তদন্তে চাটাই বিশেষ ভাবে ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া মাছ পরিবহনের জন্যও এ চাটাই ব্যবহার করা হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে পঁচনশীল কোনো বস্তু দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ তার মধ্যে এমন কোনো ঔষধী গুনাগুন রয়েছে যা প্রিজার্ভার হিসাবে কাজ করে। সিলেটের পাহাড়ী জনগোষ্ঠি বিশেষ করে খাসিয়ারা এই চাটাই ব্যপক ভাবে ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে এর ব্যপক চাহিদা রয়েছে। পান পাতা মোড়ানোর জন্য সাধারনত এগুলো ব্যবহার করা হয়। এ নিয়ে গ্রামের বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে এ পাতার ঔষধী গুনের বিষয়ে কেউ অবগত নয়। যুগ যুগ ধরে মানুষ এগুলো দেখে আসছে। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা কেউ জানেনা। মানুষের ধারণা এটি একটি সামাজিক বিধি যা যুগ যুগ ধরে মানুষ করে আসছে। তবে হাজার হাজার বছর আগে বিজ্ঞানের যখন কোনো প্রসার ছিলোনা তখন মানুষ লোকজ্ঞানে পঁচনশীল বস্তু সংরক্ষণের জন্য এটি ব্যবহার করতো। এখন সে জ্ঞান ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। এই হোগলা পাতার মধ্যে কোনো ঔষধী গুনাগুণ রয়েছে কিনা তা নিয়ে ব্যাপক গবেষনা করা যেতে পারে। যদি এর দ্বারা কোনো ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়, তাহলে এর দ্বারা চিকিত্সা শাস্ত্রের ব্যপক প্রসার ঘটবে।উপকৃত হবে দেশ ও জাতি।


প্রাপ্তীর স্থান :

নোয়াখালীর সদর থানাধীন খলিফার হাট, বাঁধের হাট, ওদার হাট, এওজবালিয়া, বিনোদপুর এসব এলাকায় সাধারণতঃ হোগলা পাতা ব্যাপক হারে জন্মে। এ এলাকাগুলো হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন উৎপাদিত পণ্যের প্রাপ্তীর স্থান হিসাবে চিহ্নিত। এছাড়াও নোয়াখালীর বিস্তীর্ণ উপকূলে হোগলা পাতা আপনাতেই জন্মে।

এ অঞ্চলের হোগলা পাতা শিল্পের প্রধান কেন্দ্রটি খলিফার হাটে গড়ে উঠেছে। সপ্তাহে রবি ও বুধবার এখানে হাট বসে। সে হাটের বিরাট একটি স্থান জুড়ে রয়েছে শুধুমাত্র হোগলা পাতা বেচা কেনার জন্য। এ ব্যবসা গড়ে উঠেছে কয়েকটি শ্রেণীর মধ্যে। একদল মাঠে গিয়ে গৃহস্থ কৃষকদের কাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করে। সে পাতা দিয়ে আঁটি বাঁধা হয়। পাতার মান অনুযায়ী আলাদা আলাদা করে আঁটি বাঁধা হয়। মান অনুযায়ী প্রতিটি আঁটির দামও হেরফের হয়। এবং ওসব আঁটির পাতা দিয়ে তৈরী চাটাইর দামেও হেরফের থাকে। সেগুলো চাটাই তৈরী করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন নারীদের কাছে। বেচা কেনার আর একটি মাধ্যম হচ্ছে ব্যবসায়ীরা হোগলা বনের মালিক থেকে বিভিন্ন মেয়াদে পুরো হোগলা বন কিনে নেয়। গ্রামের নারীরাই সাধারণতঃ চাটাই তৈরী করেন। সে চাটাই ফড়িয়ারা সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চালানের উদ্দেশ্যে জমা করে এবং তারাই এ চাটাই দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করে।

হাটুরিরা জানিয়েছে, প্রতি হাটে এখান থেকে প্রায় দু’ থেকে তিন লক্ষ টাকার চাটাই ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফরিদপুর সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করা হয়। এ নিয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয় বছরে এর পরিমাণ প্রায় কোটি টাকার উপরে। হরিনারায়ণপুর রেল ষ্টেশন থেকেই সাধারণতঃ এগুলো ট্রেনে বোঝাই হয়।

বাজারজাত করণে ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য :

চাটাই শিল্পে বাজারজাত করণ তথা ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী হল ফড়িয়ারা। স্থানীয়ভাবে যারা দালাল নামে পরিচিত। চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত একজন নারী হোগলা পাতা কেনা থেকে শুরু করে যে পরিমাণ কায়িক শ্রম দিয়ে একটি চাটাই তৈরী করে, এ ফড়িয়াদের কারণে তারা তাদের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। দেখা যায় একটা চাটাই তৈরী করতে প্রায় ৩০ টাকার পাতা কিনতে হয়। তার সাথে আছে তৈরী করা পর্যন্ত পুরো একদিনের শ্রম। শ্রমের বাজারের যার মূল্য সর্ব নিম্ন ৭৫ টাকা। কিন্তু দেখা যায় এভাবে তৈরীকৃত চাটাই যখন বাজারে আসে তখন ফড়িয়ারা এর দাম ধরে ২০ থেকে ৩০ টাকা। এ অবস্থায় দেখা যায় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ফড়িয়ারাই দাম নির্ধারণ করে থাকে। ব্যাপারটি যে কারিগররা উপলব্ধি করতে পারে না তা নয়। কিন্তু অর্থনৈতিক টানা পোড়নের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে তারা এ সমস্যা গুলোকে স্বীকার করে নিচ্ছে। পক্ষান্তরে লাভবান হচ্ছে ফড়িয়ারা। প্রতি বছর এই এলাকায় প্রায় ১ কোটি টাকার চাটাই বেচাকেনা হয়।

একজন নারী একটি চাটাই তৈরী করে বাড়ীর পুরুষ কর্তা অথবা কোন কিশোর কিশোরী কিংবা শিশুদেরকে দিয়ে বাজারে পাঠায়। সে শিশু কিশোর বা কিশোরীটি সেজে গুজে চাটাই নিয়ে বাজারে গিয়ে দাঁড়ায় তখনও সে জানেনা এ চাটাইটির ন্যায্য মূল্য কত আর এ না জানার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ফড়িয়ারা কম দামে চাটাইটি কিনে নেয়। প্রায় ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশু কিশোররা চাটাই বিক্রি করার জন্য বাজারে আসে এবং তারাই আবার বাজার থেকে হোগলা পাতার আঁটি কিনে নিয়ে যায়। এই শিশু কিশোররা অনেকেই বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। কিন্তু হাট বাজারের দিন তারা স্কুলে না গিয়ে এই চাটাই বিক্রির কাজে ব্যস্ত থাকে। সে সঙ্গে তারা বাড়ীর জন্য বাজার সদাই করে নিয়ে যায়।

চাটাই শিল্পী নারীদের ধ্যান ধারণা ও চিন্তা চেতনা :

চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত নারীরা অজ্ঞতা, অসচেতনতা, অশিক্ষা, ধর্মীয় গোড়ামী ইত্যাদির কারণে বিভিন্ন সনাতনী ধ্যান-ধারণা পোষণ করে আসছে। তবে তাদের মধ্যে জানার প্রবল ইচ্ছাশক্তি সম্পূর্ণভাবে বিরাজমান। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মত প্রকাশ করেন। তাঁরা মনে করেন, মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য এই যে, মানুষের বুদ্ধি, বিবেক আছে, আছে বিবেচনা বোধ। কিন্তু পশু পাখির মধ্যে এ গুণ গুলো সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। মানুষ হিসাবে তাদের অধিকার সম্পর্কে চিন্তাগুলো খুব স্পষ্ট নয়। তাদের মতে, একজন মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকার জন্য সরকার কর্তৃক সুযোগ সুবিধা গুলো হচ্ছে অধিকার।

কাজের মূল্যায়ন :

নিজেদের কাজের মূল্যায়নের ব্যাপারটি নিয়ে এসব নারীরা চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। একজন নারী শুধু কাজই করে যাবে, এমন একটি ধারণা পোষণ করে আছে তারা। এরা আরো মনে করেন, শুধুমাত্র পুরুষের সেবা করার জন্যই নারী জাতির জন্ম হয়েছে। গবেষণায় তারা উপলব্ধি করেন যে, কাজের মূল্যায়ন পাওয়া তাদের একটি ন্যায্য অধিকার। গ্রামের কয়েকজন পুরুষের সাথে নারীদের কাজের মূল্যায়ন সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করলে তারা স্বীকার করেন যে, নারীদের কাজের মূল্যায়ন করা উচিত। তারা বুঝতে শিখেছে পরিবারের উন্নয়নে নারীরাও ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।

মূল কথা

নোয়াখালী সদর থানাধীন দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের চরমটুয়া, ৭নং এওজবালিয়া, কালাদরাপ, বিনোদপুর প্রভৃতি ইউনিয়নের প্রায় ১ লক্ষ লোক চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত। যার মধ্যে চার ভাগের তিন ভাগই নারী। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক নারীরা আর্থ-সামাজিকক জীবন যাত্রায় সকল ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে।

আত্মসম্মানবোধ, নিরাপত্তাহীনতা, শিক্ষাদীক্ষায়, মত প্রকাশে, চিকিৎসাক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় এমনকি বেঁচে থাকার জন্য যে খাদ্যের প্রয়োজন সেখানেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রযুক্তি নির্ভর পণ্য মানুষের জীবনযাত্রাকে যান্ত্রিক করে তুলছে। মুক্ত বাজার ব্যবস্থায় উৎপন্ন পণ্যের দিনদিন প্রসার ঘটছে। অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব পণ্য ক্রমশঃ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে নারীদের হাতে বোনা চাটাই অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। অথচ বিপুলভাবে অবমূল্যায়ন হচ্ছে চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত নারীরা। চরম দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তবুও উত্তরাধীকার সূত্রে এই দরিদ্র নারীরাই এই ঐতিহাসিক শিল্পের ধারক ও বাহক। তাদের এই শিল্প চর্চা হাজার বছর ধরে প্রচলিত প্রাকৃতিক বিজ্ঞান মানসিকতার পরিচয় দেয়। এই শিল্পের মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচিত করে তুলতে পারে। সেই সঙ্গে এই শিল্পের সাথে জড়িত নারীদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

প্রশিক্ষণ, পূঁজি, বাজারজাতকরণ :

চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত নারীরা চাটাই তৈরীতে অত্যন্ত দক্ষ। এর জন্য তাঁরা কোন প্রশিক্ষণ পাননি। বংশ পরম্পরায় তারা এ কাজে দক্ষতা অর্জন করেছেন। হোগলা পাতা দিয়ে যে অন্যান্য পণ্য বানানো যায় এবং তার অনেক বাজার মূল্য আছে এ বিষয়ে তাঁরা একেবারেই অজ্ঞ। একটি গবেষণায় দেখা গেছে সামান্য প্রশিক্ষণ পেলে এ নারীরা বিভিন্ন সৌখিন দ্রব্য তৈরীতে সম হবেন। আন্তর্জাতিক বাজারে এগুলো রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সিলেটের পাহাড়ী জনগোষ্ঠি বিশেষ করে খাসিয়ারা এই চাটাই ব্যপক ভাবে ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে এর ব্যপক চাহিদা রয়েছে। পান পাতা মোড়ানোর জন্য সাধারনত এগুলো ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া সীমান্তের অপর পাড়ে চাটাই প্রচুর চালান হয়। ঘরের দৈনন্দিন কাজেও খাসিয়াদের মধ্যে চাটাই খুব জনপ্রিয়। নোয়াখালীর এই চাটাই সিলেট হয়ে খাসিয়া পুঞ্জিতে সরবরাহ হয়।

উপকূলীয় অঞ্চলে যেহেতু এই গাছ আপনাতেই জন্মে সুতরাং চাষের জন্য এর একেবারেই খরচ নেই। হোগলা গাছের পাতা পোক্ত হলে মাটির উপর থেকে গোড়া বা মূল রেখে কেটে নিলে তা থেকে আপনাতেই গাছটি আবার জন্ম নেয়। খরা বা বর্ষায় এ গাছের কোন ক্ষতি হয়না। যে কোন পরিবেশে গাছটি দীর্ঘজীবী। এক শত টাকা মূল্যের একটি চাটাই বুনতে পঁচিশ থেকে ত্রিশ টাকার হোগলা পাতার প্রয়োজন পড়ে। নারীরা ঘরে বসেই দক্ষ হাতে প্রতিদিন দুই তিনটি চাটাই বুনতে পারেন। প্রতি সপ্তাহে স্থানীয় বাজারে এগুলো বিক্রি করা যায়। এ হিসাবে যে কোন নারী খুবই সামান্য পুঁজি নিয়ে এ কাজটি করতে পারেন।


এক নজরে চাটাইঃ-

 উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী একটি কৃষি প্রধান অঞ্চল। এই জেলার প্রায় এক লক্ষ মানুষ চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে যার আধিকাংশই নারী। শিল্প কারখানার দিক দিয়ে নোয়াখালী একটি পশ্চাদপদ জেলা। শিক্ষাদীক্ষায়ও গ্রামীণ নারীরা অনেক পিছিয়ে। দৈনন্দিন ঘর কন্যার কাজ ছাড়া এদের করণীয় কিছুই থাকেনা। তবে সারাদিনের কাজের ফাঁকে ফাঁকে এরা নিত্যপ্রযোজনীয় নানান জিনিষ তৈরী করে থাকে। চাটাই তার মধ্যে অন্যতম। সম্পূর্ন হাতে তৈরী এ পন্যটি ধীরে ধীরে গ্রামীণ শিল্প হিসাবে প্রসার লাভ করেছে। গ্রামীণ নারীরাই এর প্রধান কারিগর।
 গ্রামীণ শিল্প হিসাবে এর প্রসার ঘটলেও এর জন্য কোনো পরিকল্পিত বাজারব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। যুগযুগ ধরে এ শিল্পের সাথে জড়িত থেকেও নারীরা তাদের আর্থিক অবস্থা পরিবর্তন করতে পারেনি।
 আর্থিক অস্বচ্ছলতা,সামাজিক দৈন্যতা,নারীদের প্রতি সামাজিক মূল্যবোধ ইত্যাদির কারণে এখানে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটেনি।তাই এলাকার নারীদের শিক্ষার হারও খুব কম।
 গবেষণা এলাকায় বিভিন্ন এনজিও ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এনজিওদের ঋণ কার্যক্রম মূলত তাদের সূদ ব্যবসার প্রসার ঘটেছে।
 অনেক নারীই এই ঋণের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে আছে। নারীরা তাদের নামে ঋণ নিয়ে স্বামী শ্বশুর ভাই কিংবা ছেলের হাতে তুলে দেয়। এই ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে এর ঘানি টানতে হয় নারীদেরকেই।
 এই ঋণে এরা জর্জরিত হয়ে থাকলেও ঋণ এবং অনুদান সর্বদা এদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে। যে কানো আর্থিক টানাপোড়নে এরা ঋণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
 নারীদের আয়ের পুরো অংশই স্বামী অথবা পরিবারের জন্য খরচ করা হয়। চাটাই বিক্রির টাক নারীরা স্বামীর হাতে তুলে দেয়। চাটাই বিক্রির সামান্য যে টাকাটি পায় তাও তারা নিজেরমত করে খরচ করতে পারে না।
 এলাকার মানুষদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই করুন । ৯৫%পরিবার একেবারেই নিম্ন আয়ের এখানকার পুরুষদের মূল পেশা কৃষি। ঘনবসতি পূর্ণ এই এলাকার অধিকাংশ মানুষের নিজেদের কৃষি জমি নেই। অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করেই এদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।
 এলাকার নারীরা এক সীমাবদ্ধ জীবন যাপন করে যাচ্ছে।এদের জীবন ক্ষুদ্র গন্ডির মধ্যে একই চক্রে আবদ্ধ হয়ে আছে। এলাকার সামাজিক কোনো কাজে নারীদের কোনো প্রকারের অংশ গ্রহন নেই।
 এই নারীরা বিশ্বাস করে, পুরুষরাই শ্রেষ্ঠ,নারীদের উপর কতৃত্ব করার অধিকার রয়েছে পুরুষদের। নারীদের সৃষ্টি হয়েছে পুরুষদের সেবাদাসী হিসাবে।
 হাজার কষ্টের মধ্যে থেকেও এরা অসম্ভব পরিশ্রমী ও কাজের প্রতি খুবই নিষ্ঠাবান।
 শহুরে জীবনের নানান সুবিধা বঞ্চিত শ্রমজীবী এ গ্রামীণ নারীরা গ্রামবংলার একটি অতি নগন্য কৃষি পন্য দিয়ে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে অবদান রাখছে অথচ এরা চিরকাল অবহেলিত অবস্থায় লোকচুর অন্তরালে রয়ে গেছে।
 যে পাতা দিয়ে চাটাই তৈরি করা হয় স্থানীয় ভাবে এটি হোগলা পাতা হিসাবে পরিচিত। হোগলা গাছ সাধারনতঃ ১২ থেকে ১৫ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় এর রং থাকে গাড় সবুজ। শুকানো অবস্থায় এর রং হয়ে উঠে গাড় সোনালী। প্রায় এক ইঞ্চি ব্যসার্ধ্যের ত্রিকোনাকৃতির মাংসল পাতা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
 অন্যান্য পন্যের চেয়ে অনেক সস্তায় সহজে পাওয়া যায় বিধায় নিম্নবিত্ত ও সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ এই চাটাই ব্যপক হারে ব্যবহার করে।
 এ পাতা দিয়ে চাটাই ছাড়াও ঘর তৈরির বেড়া, টুকরী,পাখা, ছোট বাক্স,শিকা,দড়ি,ঘর সাজাবার সৌখিন দ্রব্যাদি, উন্নতমানের হস্ত শিল্প তৈরী করা যায়।
 কোনো প্রকারের কৃত্রিম আঁশ এর সাথে মিশানো হয়না। এটি ১০০% পরিবেশ সম্মত।
 হোগলা গাছ প্রাকৃতিক ভাবে নীচু জলজ সা্যঁতস্যাঁতে মাটিতে আপনাতেই জন্ম নেয়। একবার জন্মালে এটি সহজে মরেনা। গোড়া থেকে কেটে নিলে সেখান থেকে এটি আপনাতেই আবার গজিয়ে উঠে
 এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকারী বেসরকারী কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তবে দু’ একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি উচ্চমানের হস্তশিল্প
তৈরী করে বিদেশের বাজারে রফতানী করার চেষ্টা করছে।
 চরম দারিদ্রতার মধ্যে জীবন যাপন করলেও এদের মধ্যে রয়েছে এক বিশেষ স্বাতন্ত্র বোধ। গ্রামীণ নারী হয়েও এরা মনে করে সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে একদিন এরা অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করতে পারবে।
 কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকায় এদের মধ্যে আছে এক অমিত সম্ভাবনা। যেকোনো কাজই এরা খুব আগ্রহ সহকারে করে থাকে।
 নোয়াখালীর কয়েকটি গ্রামীণ বাজার চাটাইয়ের জন্য বিখ্যাত। এ এলাকা থেকে মাসে কোটি টাকার চাটাই দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়
 এলাকার প্রতিটি গ্রামেই হোগলা পাতার বন রয়েছে কোনো জমিতে একবার হোগলা গাছ জন্মালে তা বহু বৎসর পর্যন্ত টিকে থাকে । মাটি থেকে শিকড় সহ মূল উৎপাটন না করলে এর বংশ বিস্তার হতে থাকে
 হোগলা পাতা দিয়ে উৎপাদিত পন্য প্রধানতঃ আভ্যন্তরিন বাজারে সরবরাহ করা হয়।
 এখান থেকে ব্যবসায়ীরা সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে।
 স্থানীয় ফড়িয়ারাই মূলত চাটাইয়ের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। নারীদের কাছ থেকে কম দামে কিনে এরা অধিক মুনাফায় দেশের বিভিন্ন যায়গায় বিক্রি করে।

মাহ্‌মুদুল হকফয়েজ সাংবাদিক
পুরাতন হাসপাতাল সড়ক
মাইজদী কোর্ট, নোয়াখালী
ফোন-০৩২১-৬১৪৭০
মোবাইল-০১৭১১২২৩৩৯৯
email:-mhfoez@gmail.com






রেফারেন্সঃ-

No comments:

Post a Comment

About Me

My photo
Mahmudul Huq Foez Free-lance journalist, Researcher.