শিশু
উদ্ভিদের নাম: শিশু গাছ Shishu
আদী নাম: শিংশপা
স্থানীয় নাম : শিশু গাছ(ছবি)
ভেজষ নাম : Dalbergia Sissoo Roxb
ব্যবহার্য অংশ : ছাল ও পাতা
রোপনের সময় : সাধারণত বৃষ্টির সময়ে অথবা সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে চারা উত্তোলন করা ভালো। এটির বীজ সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বপন করা হয়। বপনের চার মাস পর চারাটি টবে লাগানো হয়। সেখানে কিছুদিন পরিচর্যা করার পর রোপন করতে হয়।
উত্তোলনের সময় : শিশু গাছের ছাল সারা বছর পাওয়া যায় এবং পাতা গুলো ডিসেম্বর মাসের শেষে ঝরে যায় এবং ফেব্রুয়ারীতে নতুন পাতা গজায়।
আবাদী/অনাবাদী/বনজ : এটি বসতবাড়ী, বাগানে এবং রাস্তার পাশে লাগানো হয়।
চাষের ধরণ : সাধারনত উঁচু জায়গায় এটি বেশি ভাল জন্মে। যে কোনো রকম মাটিতে এ গাছ জন্মে। তবে পাহাড়ি অঞ্চলে বেশি ভাল জন্মে। রোপনের সময় ১টা গাছ থেকে ১টা গাছের দূরত্ব ১০ হাত পর্যন্ত হলে ভাল হয়। এই গাছ রোপনের জন্য ইউরিয়া সার দিলে ভাল হয়। না দিলে কোনো সমস্যা নেই।
উদ্ভিদের ধরণ : শিশু গাছ একটি বহু বর্ষজীবি বৃক্ষ।
পরিচিতি: শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট বৃহৎ গাছ। উচ্চতা ৪০-৫০ ফুট পর্যন্ত হয়। ছাল ধূসর বর্ণের ও অমসৃন,পুরানো হলে লম্বালম্বিভাবে কাটা কাটা দাগ হয়। ডিসেম্বর মাসের শেষে পুরাতন পাতা ঝরে যায় এবং জানুয়ারী-এপ্রিল পর্যন্ত নতুন পাতা জন্মায় সাধারনত মার্চ থেকে জুন মাসের মধ্যে ছোট ছোট ফুল ফোটে। এ থেকে ফল হয়। এর আকার প্রায় ২ ইঞ্চি লম্বা হয়। ফল নভেম্বর মাস থেকে পাকতে শুরু করে।
ঔষধি গুনাগুন : এ গাছের যে ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে তা নিচে দেওয়া হল।
সর্তকতা : কোনো গর্ভবতী নারীর ব্যবহার নিষেধ।
১।রক্ত বমনে: বমি হলে অথবা দাস্ত হলে ১ চা চামচ শিশুপাতার রস একটু দুধে মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে হবে। সেদিনই রক্ত বমি কমে যাবে। প্রয়োজন হলে আরও দুই দিন খাওয়া যাবে। তবে তার বেশি নয়।
২। ঋতুস্রাব আধিক্যে: মাসিকের দোষ- হয়ত মাসিক হবার সময় হয়নি অথবা হঠাৎ হয়ে গেল বা বেশি পরিমাণে হচ্ছে, এ অবস্থায় ৮/১০ গ্রাম (কাঁচা) অথবা ৫ গ্রাম শুকনো শিশুপাতা ৩/৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে, তা ছেকে সকালে ও বিকালে দুবার খেতে হবে। একদিনে এভাবে বন্ধ না হলে ২/৩ দিন খেতে হবে। অথবা ১০/১২ গ্রাম শিশু গাছের থেতো করে ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে, আন্দাজ অনুযায়ী এ কাপ থাকতে নামিয়ে সেই পানিটা খেলেও চলবে।
৩। রক্তার্শে: মলের সংগে অথবা দাস্ত হওয়ার পর প্রায়ই রক্ত পড়ে। এ ক্ষেত্রে শুকনা শিশুছাল ৫ গ্রাম অথবা কাঁচা ১০ গ্রাম থেতো করে ৪ কাপ পানিতেসিদ্ধ করার পর অনুযায়ী এ কাপ থাকতে নামিয়ে, পানিটা সকালে অথবা বিকালে খেতে হবে। যদি এটাতে রক্ত পড়া বন্ধ না হয়, তবে ছালের মাত্রাটা একটু বাড়িয়ে দিতে হবে। বেশ কিছুদিন খেলে অর্শের অসুবিধাটা ভালো হয়ে যাবে।
৪। মেদ হ্রাসে: মেদ কমাতে ২০ গ্রাম শুকনো শিশুছাল কিছু সময় ভিজিয়ে রাখার পর তা থেতো করে ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। আন্দাজ অনুযায়ী এক কাপ থাকতে তা নামিয়ে ছেকে সেই সিদ্ধ পানিটা রোজ সকালে খাবার পর) খেতে হবে। তা না হলে বিকালে খাওয়া যায়। এই ভাবে মাস খানেক খেলে মেদ কমে যাবে।
৫।জ্বালা মেহ: যে মেহ রোগে জ্বালা থাকে এবং তার সংগে ধাতু পড়ে, সেক্ষেত্রে শিশু গাছের মূলের (ছবি) শুকনা ছাল ১০/১৫ গ্রাম থেতো করে ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। আন্দাজ অনুযায়ী এক কাপ থাকতে তা নামিয়ে ছেকে সেই সিদ্ধ পানিটা সকালে ও বিকালে দুবার খেতে হবে। এভাবে দু’তিন দিন খেলেই ঐ জ্বালাটা কমে যাবে। এবং ধাতুর স্রাবটাও আর থাকবে না।
৬। সায়টিকায় (কি???): এর জন্য ১৫/২০ গ্রাম শুকনো শিশুছাল কিছু সময় ভিজিয়ে রেখে করে ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। আন্দাজ অনুযায়ী এক কাপ থাকতে তা নামিয়ে ছেকেসেই পানিটা রোজ একবার করে কয়েকদিন হবে। বেশি দিন খেলে একেবারে কমে যাবে।
৭। বাতরক্তে : এই রোগের জন্য শিশুগাছের ২০ গ্রাম শুকনো ছাল গুঁড়ো করে ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। আন্দাজ অনুযায়ী এক কাপ থাকতে নামিয়ে তা ছেকে সেই সিদ্ধ পানিটা সকালে ও বিকালে দুবার খেতে হবে। এটা মাসখানেক ব্যবহার করলে ওই বাতরক্ত জনিত উপসর্গগুলি আর আসবে না।
সূত্রঃ
চিরঞ্জীব বনৌষধী
আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য
মাহমুদুল হক ফয়েজ
মুঠোফোনঃ ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail:- mhfoez@gmail.com
No comments:
Post a Comment