Scrollwhite

মাহমুদুল হক ফয়েজ My name is Mahmudul Huq Foez, I am a journalist, leaving in a small town, named Noakhali , which is situated in coastalzila of Bangladesh

হোমপেইজ | আর্টিকেল | ছোটগল্প | ফিচার | মুক্তিযুদ্ধ | বনৌষধি | সুস্বাস্থ্য | কবিতা | যোগাযোগ

মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম

দুঃসাহসিক মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম এখন দিন মজুর

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

সমাজের নানা বঞ্চনা আর প্রতারনার শিকার হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালামের জীবন চলে দিন মজুরী করে।
সে চেয়েছিল এক সুখী সমৃদ্ধশালী স্বপ্নময় দেশ। যেখানে বঞ্চনা আর হতাশার কোন চিহ্ন থাকবে না। যেখানে থাকবে না অভাব আর দৈন্যতা। অথচ সেই মুক্তিযোদ্ধাই পতিত হলো এক দুঃসহ অশুভ আবর্তে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আবুল কালাম ছিল ২২/২৩ বছরের উদ্দাম যুবক। ঢাকার ডেমরায় আহম্মদ বাওয়ালী জুট মিলের শ্রমিক ছিল সে। সেখানে ১৪২ নং তাঁত চালাতো। স্বাধীনতা পূর্ব শ্রমিক আন্দোলণের সাথেও জড়িত ছিল। অল্প পড়াশোনা জানা আবুল কালাম সংগঠনের কারনে রাজনৈতিক সচেতনতা ছিল যথেষ্ট। একাত্তরে দেশে মুক্তি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে ঢাকা থেকে সে পালিয়ে নোয়াখালী সদরের অশ্বদীয়ায় তার গ্রামের বাড়ী চলে আসে। তার বাবা ছিল আবু বকর সিদ্দিক একজন কৃষি জীবি। ছোট বেলা তার বাবার মৃত্যু হলে তার চাচার কাছেই থাকতো সে। গ্রামে এসেই মুক্তি যুদ্ধে যোগ দেয়। এরপর ট্রেনিং এর জন্য ভারতের মেলা ঘরে চলে যায়। সেখানে লোহারবন্ধ ক্যাম্পে ভারতীয় প্রশিক্ষক সুবল সিং এর অধিনে ট্রেনিং গ্রহণ করে। ট্রেনিং এর শেষে ১৭১ জন মুক্তিযোদ্ধা সহ বিলোনিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। দেশে প্রবেশ করেই বিলোনীয়া যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। সেখানে পাকিস্তান বাহিনীর উপর আক্রমন করলে শত্রু বাহিনীর প্রায় দশ হাজার সৈন্যের বিরাট বাহিনী তাদের চর্তুদিক থেকে ঘিরে ফেলে। কিন্তু অতন্ত সাহসীকতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে সুকৌশলে অন্যান্ন সহযোদ্ধাদের নিয়ে তারা সেখান থেকে মুক্ত অঞ্চলে সরে আসতে সক্ষম হয়। এর পর তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে কমান্ডার রফিকের অধীনে নোয়াখালীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে একটি অপারেশনে যাবার আগে রাজাকার কমান্ডার হাফিজের বাহিনীর কাছে ৬জন সহযোদ্ধা সহ ধরা পড়ে। তাদের মধ্যে ছিল স্বদেশ, রফিক, সিরাজ মানিক দুলাল। মিলিশিয়া বাহিনী কবিরহাটের একটি নির্যাতন কেন্দ্রে তাদের আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করতে থাকে, তাদের কাছ থেকে মুক্তিবাহিনীর গোপন ঘাঁটির খবর নেয়ার চেষ্টা করে। এক নাগাড়ে তিন দিন অকথ্য নির্যাতনের সময় খেজুর কাঁটা দিয়ে নির্মম ভাবে সারা শরীর ফুঁড়ে দেয়। এক পর্যায়ে হাতের কব্জির রগ বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে কেটে দেয় তবু তাদের থেকে কোন তথ্য না পেয়ে ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে গুলি করার হুকুম হয়। তিন দিন পরে গভীর রাতে শেষ চেষ্টা করে ঘরের ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে বেরিয়ে প্রহরারত রাজাকারদের রাইফেল নিয়ে দুঃসাহসিক ভাবে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। এর কয়দিন পর তার তিন সহযোগীকে বধ্য ভূমিতে নেয়ার পথে হানাদার বাহিনী থেকে ছিনিয়ে আনেন। ৭ই ডিসেম্বর নোয়াখালী সদর আক্রমনের সময় তিনি পূর্ব দিক থেকে আক্রমনে অংশ গ্রহন করেন। যুদ্ধ শেষ হলে বেগমগঞ্জ মুক্তিবাহিনী ক্যাম্পে মেজর হায়দার এর কাছে অস্ত্র সমর্পন করেন।

এই বীর যোদ্ধার সাথে কথা হচ্ছিল নোয়াখালীর দক্ষিন চরাঞ্চলের থানার হাট নিজেরা করি সংগঠনের অফিসের উঠোনে। সারাদিন বদলা খেটেছেন। পায়ে গায়ে তখনো লেগে আছে পবিত্র মাটির ভেজা কাদা। জীবনে যা পাওয়ার ছিল সেই স্বাধীনতা পেয়েই সে সুখী। স্বাধীন দেশে নির্মল বাতাস বুক ভরে নিতে পারছে এই তার শান্তনা। ১৯৮৮-৮৯ ইং সনের ভূমি বন্দবস্ত প্রকল্পে সুন্দলপুর ইউনিয়নের নবগ্রামে দুই একর কৃষি জমি পেয়েছিল। বছর যেতে না যেতেই দুই প্রভাবশালী মহল তার সে জমি ভূয়া কাগজ দেখিয়ে গ্রাস করে ফেলে। বর্তমানে শুধু ভিটেটি আছে। নানাজনের কাছে ধর্না দিয়েও সে জমি উদ্ধার করতে পারে নি।

এক ছেলে দুই মেয়ের সংসার। ছেলেকে টাকার অভাবে পড়ালেখা করাতে পারেন নি। এখন ছেলে তাকে তার কাজে সাহায্য করে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিল। যৌতুকের জন্য স্বামী মেয়েকে তার কাছে রেখে গেছে আবার। দৃঢ় চিত্তে কথা বলে আবুল কালাম। কারো রিবুদ্ধে অভিযোগ নেই। এক গৌরবময় যুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশের নাগরিক সে এই তার বড় পাওনা।

আজ আমাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন জাগে, জীবন বাজী রেখে যে অকুতভয় যোদ্ধারা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আমাদেরকে উপহার দিল একটি স্বাধীন দেশ তাদের জন্য কি আমাদের কিছুই করনীয় নেই।

No comments:

Post a Comment

About Me

My photo
Mahmudul Huq Foez Free-lance journalist, Researcher.