Scrollwhite

মাহমুদুল হক ফয়েজ My name is Mahmudul Huq Foez, I am a journalist, leaving in a small town, named Noakhali , which is situated in coastalzila of Bangladesh

হোমপেইজ | আর্টিকেল | ছোটগল্প | ফিচার | মুক্তিযুদ্ধ | বনৌষধি | সুস্বাস্থ্য | কবিতা | যোগাযোগ

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অশ্বদীয়ার শহিদ সুলতান মাঝি

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অশ্বদীয়ার শহিদ সুলতান মাঝি
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অশ্বদীয়ার শহিদ সুলতান মাঝি

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে অত্যন্ত নৃশংশভাবে নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নোয়াখালীর অশ্বদীয়ার সুলতান মাঝি। সে সময় তাঁর বয়স ছিলো প্রায় সত্তরের কাছা-কাছি। একাত্তরের পূর্বে তিনি অশ্বদীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হবার পূর্ব থেকেই স্বাধীনতার আন্দোলনের সময় নোয়াখালীর এ প্রত্যন্ত গ্রামে তিনি সভা সমিতির মাধ্যমে গ্রামের মানুষদের উদ্ধুদ্ধ করতে থাকেন। ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শরু হলে তিনি গ্রামের মানুষদের নিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধের জন্য তৈরী হন। তিনি ছিলেন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি। সে সময় সে এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে উঠে। ক্যাম্প কমান্ডার ছিলেন কমান্ডার নূর মোহাম্মদ। সব কিছুই সুলতান মাঝির নেতৃত্বে গড়ে উঠে। স্বাধীনতার প্রায় ত্রিশ বছর এই অকুতভয় সংগঠনের কথা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু এলাকার অনেক প্রবীন লোক তাঁর আত্মত্যাগের কথা আজো শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরন করেন। এলাকার লোকজন তাঁকে হাজী সাহেব বলে ডাকতো। তাঁর বড় ছেলে মোঃ আবু তাহের (৬৮) জানালেন মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা ছাড়াও যুদ্ধের সময় তিনি দিনমনি বাজারের মসজিদের সামনের মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বড় বড় হাঁড়িতে রান্না করে নিয়মিত সরবরাহ করতেন। যুদ্ধের মাঝা মাঝি সময় রাজাকার আলবদর বাহিনী অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠে। এ সময় তারা প্রায় লোকজনদের ধরে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করতো। শহীদ সুলতান মাঝির বড় ছেলে মোঃ আবু তাহের কান্না জড়িত কন্ঠে জানালেন সেপ্টেম্বরের মাঝা মাঝি সময় সুলতান মাঝি তাঁর এক মেয়ের বিয়ের বাজার করার জন্য মাইজদী শহরে আসেন। শহরে এসে তিনি আর বাড়ী ফিরে যান নি। আত্মীয় স্বজনরা চতুর্দিকে তার খোঁজ করতে লাগলো। সবার সন্দেহ হয় রাজাকাররা তাঁকে ধরে নিয়ে গেছে। সে সময় রাজাকার ও পাকিস্তানিদের প্রধান ক্যাম্প ছিলো মাইজদী পি.টি.আই, নোয়াখালী সদর হাসপাতালের নির্মানাধীন পাকা ভবন ও বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুলে। সে সময় নোয়াখালীর এক কুখ্যাত রাজাকার ছিলো হাফেজ আনোয়ার। তার বাড়ী সুলতান মাঝির বাড়ীর কাছেই। তখন সে জানালো, সুলতান মাঝির খোঁজ করে কোন লাভ হবে না, যা হবার হয়ে গেছে। তখন আবু তাহেরের এক ভাই বশর মাইজদী এসে জানতে পারে পাকিস্তানি ক্যাম্পে তাঁকে রাজাকাররা ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করে। নানা জনের কাছে খোঁজ করে তারা আরো জানতে পারে বয়বৃদ্ধ সুলতান মাঝিকে কেমন করে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। সেদিন বাড়ী থেকে এসে সুলতান মাঝি মাইজদী বড় মসজিদের যোহর নামাজ পড়তে যান। সে সময়ই তাঁকে খুনী রাজাকাররা ধরার জন্য ওঁত পেতে থাকে। নামাজ পড়া শেষ হলে দুই রাজাকার তাঁকে রিক্সায় করে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ো যায়। প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানায় সেখান থেকে রাজাকাররা তাঁকে জীপের পিছনে বেঁধে টেনে হিঁচড়ে হাসপাতালের মিলিটারী ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে দুদিন ধরে অমানুষিক নির্যাতন করার পর নির্মম ভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়। পাষন্ডরা রাইফেলের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে শরীরের সমস্ত মাংস ও হাঁড় থেঁতলে দেয়। এলাকাবাসীরা জানায় হত্যা করার পর শেষ রাতের দিকে রাজাকাররা তাঁর পা দঁড়ি দিয়ে বেঁধে শিয়াল কুকুরের মত টেনে এনে ক্যাম্পের পশ্চিমে একটি গর্তে পুঁতে রাখে। গর্তে লাশের পা ছিলো পশ্চিমে এবং মাথাছিলো পূর্বে। খুনী রাজাকাররা তাঁর লাশ যেভাবে টেনে এনেছিলো সে ভাবেই গর্তে পুঁতে রাখে। সে স্হানটি এখন একটি গণকবর হিসেবে পরিচিত। তাঁর আত্মীয় স্বজনরা পরে সেখান থেকে লাশ তুলে অশ্বদীয়ার দিনমনি বাজারে নিয়ে আসে। এ সময় তাঁর লাশ পঁচন ধরে গিয়েছিলো। দিন মনি বাজারের মসজিদের পাশেই তাঁকে দাফন করা হয়। মোঃ আবু তাহের জানান স্বাধীনতার পর দুই কুখ্যাত রাজাকার হাফেজ আনোয়ার ও সামুছুদ্দিন মাষ্টারকে প্রধান আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। সে সময় তারা জেলে আটক ছিলো। তাদের নামে আরো অনেক সুনির্দ্দিষ্ট মামলাও ছিলো। কিন্তু পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর অন্যান্য রাজাকারদের সাথে তারা ছাড় পেয়ে যায়। হাফেজ আনোয়ার এখন একটি মৌলবাদী সংগঠনের সক্রিয় নেতা এবং সামছুদ্দিন মাষ্টার একটি স্কুলে মাষ্টারী করে।
শহিদ সুলতান মাঝির পৌত্র সংবাদ কর্মী আবু নাছের মঞ্জু জানায় তাঁর একটি ছবি স্মৃতি হিসাবে তারা আজো ধরে রেখেছে। দীর্ঘ ত্রিশ বছরে সে ছবিটি এখন প্রায় বিবর্ন হতে চলেছে। এ্‌ই ছবিটির সুলতান মাঝির একমাত্র স্মৃতি।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার সুলতান মাঝির আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁর স্ত্রীর নামে একটি অনুদানের চেক পাঠিয়ে ছিলেন। তারপর আজ পর্যন্ত আর কেউ কোন খোঁজ খবর রাখেনি।
স্বাধীনতার দীর্ঘ ত্রিশ বছর পর মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক আত্মত্যাগের কাহিনী, অনেক গৌরবময় স্মৃতি ধূসর ধূলিতে আচ্ছাদিত হয়ে আছে। বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবার আগেই সে সব গৌরব গাঁথা কাহিনী গুলো ইতিহাসের সোনালী পাতায় আমাদের লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে।


মুক্তকন্ঠ
ঢাকা, সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০০০






প্রকাশিত
মুক্তকন্ঠ

No comments:

Post a Comment

About Me

My photo
Mahmudul Huq Foez Free-lance journalist, Researcher.