Scrollwhite

মাহমুদুল হক ফয়েজ My name is Mahmudul Huq Foez, I am a journalist, leaving in a small town, named Noakhali , which is situated in coastalzila of Bangladesh

হোমপেইজ | আর্টিকেল | ছোটগল্প | ফিচার | মুক্তিযুদ্ধ | বনৌষধি | সুস্বাস্থ্য | কবিতা | যোগাযোগ

একাত্তরে ফিরিঙ্গী পোল

একাত্তরে ফিরিঙ্গী পোল
নোয়াখালী ফিরিঙ্গী পোলে রাজাকার আলবদর বাহিনী হত্যা করেছিল শত শত মুক্তিপাগল বাঙ্গালীকে

মাহমুদুল হক ফয়েজ

১৯৭১ ইং সনের মহান স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় নোয়াখালীতে রাজাকার আল বদর বাহিনী বেশ কয়টি বধ্যভূমি সৃষ্টি করে। নিরীহ নিরস্ত্র মানুষদের গুলি করে হত্যা করার জন্য তারা কয়টি স্থান বেছে নেয়। তার মধ্যে অন্যতম একটি স্থান মাইজদী শহর থেকে কবিরহাটমুখী রাস্তার উপর নোয়াখালী খালের ফিরিঙ্গীপোল। শহরের পূর্বপাশে রেল লাইনের ধারেই নাহার মঞ্জিল। এটি ছিল রাজাকারদের ধরে এনে এখানে নির্মম অত্যাচার করা হতো। এই ক্যাম্পে ছিল সম্বল কোম্পানী নামে এক হিংস্র ঘৃনিত রাজাকার কমান্ডার। এখান থেকে গ্রামের আসে পাশে সে চালাত লুটতরাজ আর প্রসারিত করতো তার হিংস্র থাবা। আঁতরেজ্জামান নামে ছিল এক কুখ্যাত জল্লাদ। তাকে বলা হয়েছিল একটি মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করলে সত্তরবার হজ্বের সওয়াব পাওয়া যাবে। আর সেও হয়ে উঠেছিল রক্ত খেকো এক হিংস্র শ্বাপদে। মানুষ খুন তার কাছে ছিল এক সাধারন ব্যপার। এই ক্যাম্পে ছিল শান্তি কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান, রাজাকার কমান্ডার হাফেজ আনোয়ার, ছিল জগদ আলী মাঝির ছেলে কুখ্যাত রাজাকার বাবুল, কুখ্যাত কাঞ্চন। রাতের আঁধারে ওরা মানুষদের হাত চোখ বেঁধে ক্যাম্পের প্রায় এক কিলোমিটার পূর্বে ফিরিঙ্গী পোলে নিয়ে আসতো। গ্রামবাসিরা জানায় সাধারনতঃ রাত দশটা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত তারা এখানে হত্যা যজ্ঞ চালাতো। মাঝে মাঝে দিনের বেলায় ও তারা এখানে হত্যা যজ্ঞ চালাতো। তখন জারি করতো সান্ধ্য আইন। ভয়ে কেউ আসে পাশে থাকতো না। গ্রামের বৃদ্ধ মানুষ চৌধুরী মিয়া। তার কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা খবরা খবর সংগ্রহ করতো। স্মৃতি হাতড়ে আবেগ আপ্লুত কন্ঠে তিনি জানালেন কত শত লোককে যে এরা এখানে এনে মেরেছে তার হিসাব নেই। তখন এটি ছিল কাঠের পোল। একটি কাঠের তক্তা ছিল একটু লম্বা। রাজাকাররা ওখানে মানুষদের দাঁড় করিয়ে গুলি করতো। সাথে সাথে রক্তাক্ত লাশ ঢলে পড়তো খালের পানিতে। আর তা শ্রোতে যেত ভেসে। ‘রাতে পোলের দিক থেকে গুলি শুনলেই আমরা কলেমা পড়তাম, ইন্নালিল্লাহ পড়তাম। মাঝে মাঝে শুনতাম করুন আর্তনাদ। ’ পোলের পাশেই বৃদ্ধ আব্দুল গোফরান মিয়ার চায়ের দোকান, প্রায় ৩৫ বৎসর দোকানদারী করেন। আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন ‘এই পোলের কত কাহিনী তা বলেও শেষ করা যাবে না। স্বাধীনের সাতাশ বছরেও কেউ খোঁজ নিতে এলো না। ‘কত মানুষদেরকে যে ওরা মেরেছে তার হিসাব নেই।’ রাতে গুলির আওয়াজ পেতাম সকালে এসে দেখতাম হাত পা চোখ বাঁধা লাশ পানিতে ভেসে যাচ্ছে।’ রাজাকারদের নির্মম নিষ্ঠুর হত্যার স্বাক্ষী হয়ে আছে গ্রামের বৃদ্ধ আরব আলী, কলিম উদ্দিন, সেই নিষ্ঠুর কালের স্বাক্ষী ফিরিঙ্গীপোলের দিকে তাকিয়ে তারা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ভাবে কত জানা অজানা রক্তের স্রোত ধারায় স্বাধীন হলো এই দেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাসে তাদের নাম কোনদিন কেউ হয়তো বলবে না। এই পোলের নীচের পানিতে ওরা একদিন ভেসে গিয়েছিল, একদিন ওরা হয়তো চিরতরে হারিয়ে যাবে অনন্ত স্রোত ধারার মত বাংলার চির শ্যামল প্রান্তরে। হয়তো বা আবার ফিরে আসবে অদুরে ফোটা অগুনিত রক্তিম শাপলার মতন।

প্রকাশিত
মুক্তকন্ঠ

No comments:

Post a Comment

About Me

My photo
Mahmudul Huq Foez Free-lance journalist, Researcher.