সুরমার মিয়ার পানসে জীবন
মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
পঁচানব্বই বছর বয়সের শেষ প্রান্তে এসে সুরমা মিয়া খুঁজে দেখেন জীবনের ফেলে আসা সোনালী দিনগুলোকে। জীবনটা শুরু করেছিলেন তিনি বাড়ি বাড়ি পানি সরবরাহ করে। নোয়াখালীর মাইজদী শহরের বড় দীঘি থেকে শহরের কয়টি পরিবারে নিয়মিত পানি সরবরাহ করতেন তিনি। যে সুরমা মিয়া একদিন দেখা না দিলে পানির জন্য সবার হাহাকার পড়ে যেতো, জীবন সায়াহ্নে এসে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা সে সুরমা মিয়ার হাহাকার শুনার এখন আর কারো অবসর নেই। পঞ্চাশের দশকে পুরাতন নোয়াখালী শহর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে তখন তড়িঘড়ি করে নতুনভাবে নোয়াখালী শহর স্থানান্তরিত হয় বর্তমান মাইজদীতে। সুরমা মিয়ার যায়গা জমিও তখন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সর্বশান্ত হয়ে তিনিও তখন সবার সাথে নতুন শহরে চলে আসেন । নতুন শহরের জন্য তখন কাটা হয়েছিলো একটি বিশাল দীঘি। সে দীঘির পানিই ছিলো তখন নতুন শহরবাসির একমাত্র ভরসা। সেই দীঘির কাছাকাছি নতুন বসতি গড়ে উঠে। সুরমা মিয়া সে সব বাসা বাড়িতে নিয়মিত পানি সরবরাহ করতেন। যাঁদের বাসায় তিনি পানি দিতেন তাঁরা সবাই ছিলেন শহরের গন্যমান্য মানুষ। পানি নাহলে যে তাঁদের চলতনা। রান্না বান্না থেকে শুরু করে সব কাজেই পানির প্রয়োজন হোত। সুরমা মিয়া না হলে সব কিছুই অচল হয়ে যেত। দুদিকে দুটি টিনের ভান্ড বেঁধে একটি ভারিতে করে তিনি পানি টানতেন। শরীরও তখন ছিলো শক্ত সামর্থ। তখন প্রায় সারাদিনই পানি টানতে হতো। এভাবে পানি টানতে টানতে তাঁর দুকাঁধের মাংশপেশী কালচে হয়ে গিয়েছিলো তবুও কর্তব্য কাজে তিনি কোন অবহেলা করতেন না। পানি সরবরাহ করেই যেন তিনি সুখ পেতেন। কোনো অবসরও ছিলোনা তাঁর। সারা বছর পানি টেনে যা পেতেন সে দিয়েই তাঁর সংসার কোনো রকমে চলে যেত। ছয় ছেলে মেয়েকে কাউকে তিনি তেমন পড়ালেখা করাতে পারেননি। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা কেউ তেমন কোনো ভালো কাজ করেনা। তারা সবাই বড় হয়েছে। নিজেদের নিয়েই এখন ব্যস্ত। আর জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখন অন্যের দ্বারস্থ হতে হয় সুরমা মিয়ার। কথাও এখন তেমন বলতে পারেননা। কন্ঠ জড়িয়ে কথা আর ফুটতে চায়না। স্মৃতির রোমন্থনে উদাস হয়ে তাকানো ছাড়া তার এখন আর কোনো ভাষা নেই। এখন কেউ তার খবর রাখেনা। তবু বুকভরা এক তৃপ্তীর স্বাদ তিনি বহন করে চলেছেন। একদিন তো সবাইকে পানি দিয়ে তৃপ্ত করতে পেরেছেন। শেষ জীবনে এসে সুরমা মিয়ার এইটুকুই তো মস্ত বড় শান্তনা।
মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
মুঠোফোন: ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail: mhfoez@gmail.com
Mahmudul Huq Foez,
journalist,
Noakhali ,
Bangladesh
No comments:
Post a Comment