Scrollwhite

মাহমুদুল হক ফয়েজ My name is Mahmudul Huq Foez, I am a journalist, leaving in a small town, named Noakhali , which is situated in coastalzila of Bangladesh

হোমপেইজ | আর্টিকেল | ছোটগল্প | ফিচার | মুক্তিযুদ্ধ | বনৌষধি | সুস্বাস্থ্য | কবিতা | যোগাযোগ

গলাছিলা মুরগীর জীবন যুদ্ধ


গলাছিলা মুরগীর জীবন যুদ্ধ
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

গ্রাম বাংলার গৃহস্থ নারীদের সাথে গৃহপালিত মুরগীর রয়েছে এক নিবীড় প্রাণের সখ্যতা। গৃহস্থ বঁধূদের কাছে ঘরের মুরগীগুলো হলো নিকট আত্মীয় স্বজনের মত। খাঁচায় বা বদ্ধ ঘরে যাঁরা মুরগী পালণ করছেন অর্থাৎ পোলট্রী ফার্ম করে টাকা বানাতে চাইছেন, তাঁরা পরিবেশের প্রতিকূলে কি পরিমান মানসিক চাপে এ কাজটি করছেন একমাত্র তারা ছাড়া এর মর্ম কেউ অনুধাবন করতে পারবে না। শহর লোকালয়ে আঁটঘাট বেঁধে অনেকেই লাভের আশায় নেমে পড়েন পেলট্রী ব্যবসায়। কিন্তু দেখা গেছে কিছুদিন পরেই পুঁজি হারিয়ে অনেকেই এ ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। অবশ্য অনেকেই আবার টিকে আছেন যথেষ্ট পুঁজির কারনে। মফস্বল শহরগুলোতে দেখা যায় বাড়ীর আঙ্গিনা কিংবা ছাদে দিব্বি মুরগী খামার গড়ে উঠেছে। মুরগীর এ্ই বাণিজ্যিকীকরণ পুঁজিতান্ত্রিকতার মানসিকতা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মূল লক্ষ টাকা বানানো। খামার মালিকরা প্রতিদিন দেখেন খাঁচায় বন্দী মুরগীটি কতটুকু নাদুস নুদুস হলো। কতটুকু ওজন বাড়লো। কিংবা দেখেন প্রতিদিন মুরগীগুলো কয়টা ডিম পেড়েছে। ওদের জন্য খাবার দাবার আরাম আয়েশ যত্ন আত্তির শেষ নেই। মাংসল মুরগী আর বড় বড় রঙ্গিন ডিম দেখে তারা খোঁজ খবর নেন বাজারে। কোথায় দুপয়সা বেশী দরে বিক্রি করা যায়। এটা হলো পুঁজি দিয়ে পুঁজি বাড়ানোর কারখানা। মধ্যখানে বেচারা মুরগী পুঁজির যাঁতাকলে পড়ে পুঁজি ওয়ালাদের পকেট ভারী করেই চলেছে। তাঁদের কাছে মুরগী হলো একটা পন্য। একটা বাণিজ্য। এখানে কোন প্রাণের স্পর্শ নেই। কেবল লাভ আর টাকা।







কিন্তু গ্রামবাংলার কৃষান বঁধূরা মুরগীকে স্রেফ জন্য হিসাবে দেখেন না। তারা দেখেন মুরগীগুলো তাদের জীবনের সহচর, অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হিসাবে। তাই পোল্ট্রী শিল্পের এত প্রসার ঘটলেও বাংলার গৃহবঁধূরা দেশী-মুরগীদের ছুঁড়ে ফেলে দেয় নি। বরং কেউ কেউ আরো মমতা দিয়ে এদের আকঁড়ে ধরেছে।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার রাজগঞ্জ বাজারের পাশেই থাকেন গৃহবঁধু হাসিনা আক্তার (২০)। স্বামী- মফিজ উল্ল্যাহ (৩২) শাশুড়ী মাসুদা বেগম (৭০) আর ছোট্ট তিন বছরের শিশুপুত্র নিয়ে তার সংসার। তবে হাসিনা আক্তার বলেন, ‘আমাদের সংসারে আরো আছে, ক’ জোড়া কবুতর, ছয়টি হাঁস, আর আছে দশ-বারটি মোরগ মুরগী। তাদের ভিতর দু’টি মুরগী দিব্বি বাচ্চা নিয়ে ঘুরছে। সাদা রঙ্গের একটি মুরগীর আছে চারটি বাচ্চা। আর আছে একটি গালাছিলা মুরগী, তার আছে দশটি বাচ্চা। সাদাটির বাচ্চাগুলো ফুটেছিলো দু্ই মাস আগে। দশটি ডিম ‘তা’ দিয়েছিলো সে, কিন্তু ফুটেছে পাঁচটি। কয়দিন পর একটি বাচ্চাকে কাকে নিয়ে গেছে। বাকীগুলো খুব নিরাপদ নয়। কারন মা মুরগীটা বাচ্চা পালনে অত দক্ষ নয়। অন্যদিকে গলাছিলা মুরগীর উমে ‘তা’ দেওয়া হয়েছিলো দশটি ডিম। ‘তা’ দেয়া সে দশটি ডিমই ফুটেছে। প্রায় এক মাস হোলো, মুরগীর বাচ্চাগুলো অক্ষতই রয়েছে। পাশাপাশি দু’টি মুরগী দেখে যে কেউ আন্দাজ করতে পারবে, গলাছিলা মুরগীটি অসম্ভব চঞ্চল, সজাগ আর যুদ্ধংদেহী। আবার বাচ্চাদের প্রতি স্নেহ মমতা আদর যেন ঝড়ে পড়ে। কাউকে চোখের আড়াল হতে দেয় না। খাবার অন্বেষনেও তৎপর সে। পা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে পাতা আর আর্বজনা উল্টিয়ে দেখছে ছোট ছোট পোকা মাকড় আর খাবার। মুখ দিয়ে এক ধরনের ‘কুট কুট’ শব্দ করে চলছে। বাচ্চাগুলো এদিক ওদিক মজা করতে করতে ঘুরে ঘুরে খাওয়ার বেছে খাচ্ছে। শুধু খাওয়ার খাইয়েই সে কাজ শেষ করছে না। উপরে নীচে চর্তুদিকে তার শত্রু । তার শ্যোন দৃষ্টি সে দিকে। কোনোদিক থেকে শত্রু ঝাঁপিয়ে পড়ে কিনা। কোথাও কোন শব্দ হলেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ফিরে তাকায়। গলায় এক ধরনের সতর্ক আওয়াজ হতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছানাগুলো মা মুরগীর কাছে ছুটে আসে। মা মুরগী একটু নীচু হয়ে ডানা মেলে ধরে । তখন বাচ্চারা ওখানে লুকায়। নিরাপদ থাকে। বিপদ কেটে গেলে বাচ্চারা আবার মায়ের ডানার নিচে থেকে বেরীয়ে পড়ে। বাচ্চাদের বাঁচানোর জন্য গলাছিলা মুরগীদের আরো ভয়ঙ্কর রক্তাক্ত যুদ্ধে নামতে হয়। বাচ্চাদের নিয়ে যখন মা মুরগী ঝোপ ঝাঁড় জঙ্গল বা ডাঙ্গার ভিতর চলে যায়, সেখানে পদে পদে থাকে বিপদ। তখন মা মুরগী থাকে সতর্ক। ঝোপ ঝাঁড়ের আড়ালে ওঁৎ পেতে থাকে বেজী, গুঁই সাপ। উপরে ঊড়ে কাক, চিল। গলা ছিলা মুরগীর চতুর্দিকে খেয়াল। কেউ যদি হামলে পড়ে বাচ্চাদের উপর। সেও ফিরতি হামলা করে ওদের। রীতিমত যুদ্ধ শুরু করে দেয়। বাঁচিয়ে রাখে বাচ্চাদের। কাক, চিল, বেজী ধারে কাছেও ভিড়তে পারে না। হাসিনা আক্তার আর শাশুড়ী বৃদ্ধা মাসুমা বেগম এগুলো দেখেন। হাসিনা বেগম সকালে খুব ভোরেই বাচ্চাগুলোসহ মুরগীকে ছেড়ে দেন। তখন সামান্য কয়টা খুঁদ কুড়ো দিয়ে ওদের সকালের খাওয়া হয়। তারপর ওরা চলে যায় ডাঙ্গায় ওদের মত করে, হাসিনা আক্তার সারাদিন ওদের দিকে আর তেমন খেয়াল করেন না। মাঝে মাঝে কান খাড়া রোখেন। উঁকি দিয়েও মাঝে মাঝে দেখেন। ব্যাস এতটুকুই। বাকী সংগ্রামটা মুরগীটাই করে। বৃদ্ধ মাসুমা বেগমের সারাজীবনের অভিজ্ঞতা। গলা ছিলা মুরগী বাচ্চাদের ঠিক ভাবে লালণ পালণ করতে পারে। তিনি বলেন, ‘মাইদ্যে মাইদ্যে কাউয়া, কুরা আইলে, মুরগীটা যেন হোঁত করি উডে’। উরি উরি কাউয়ারে দোড়ায়। ঠোঁখরাইতো যায়। এরুম করে যেন্ বাগিচা উল্টাই হাল্টাইবো। গলাছিলা মুরগীর দাফানী খাই বেগ্গুন ধাই যায়’। অর্থাৎ তিনি বলছেন, ‘মাঝে মাঝে কাক চিল আসলে মুরগীটা যেন ফোঁস করে উঠে। উড়ে উড়ে কাককে তাড়ায়। ঠোঁকর মারতে যায়। এমন ভাব করে যেন বাগান বাগিচা উল্টিয়ে ফেলবে। গলাছিলা মুরগীর তাড়া খেয়ে সবাই পালিয়ে যায়’। তাই হাসিনা আক্তার আর শাশুড়ী মাসুমা বেগমের পছন্দ গলাছিলা মুরগী। এই রকম মুরগীকে স্থানীয়রা বলে ‘হুক্কুনী’ মুরগী। হক্কুনী অর্থ শকুনী। শকুনদের গলায় পালক থাকে না। এই মুরগীগুলো শকুনের মত দেখতে তাই তার এমন নাম দিয়েছে স্থানীয় কৃষানীরা। মুরগীর বাচ্চা ফুটাতে গৃহস্থ' বঁধূরা প্রথমেই ‘হক্কুনী’ মুরগী পছন্ন করেন। কারন এরা অন্যমুরগীদের তুলনায় বাচ্চাদের বেশী লালণ পালণ করতে পারে। আপদ বিপদ থেকেও এরা বাচ্চাদের রক্ষা করে। গ্রামের অনেক গৃহবঁধূ জানিয়েছে, গৃহস্থ' ঘরে মুরগী পালণে কোন খরচই হয় না। প্রতিদিনের খাওয়া থেকে উচ্ছিষ্ট ভাত ঝুটা ওদেরকে দেয়া হয়। বাকী খাদ্য ওরাই নানান জায়গায় বিচরণ করে খুঁজে নেয়। এদের মাংস ডিমও খুব সু-স্বাদু। ফার্মের মুরগী অনেকেই পছন্দ করেন না। অনেকের কাছে বিদেশী মুরগীর মাংসে ও ডিমে ঔষদের গন্ধ লাগে। তাই তাদের এগুলো খেতে রুচি আসে না। কিন্তু দেশী মুরগীর মাংসে ও ডিমে অন্যরকম স্বাদ আছে। দেশী মুরগী ছোট হলেও বাজারে এর দাম বেশী। আবার ডিম ছোট কিন্তু দাম বেশী। পোল্ট্রীর নাদুস নুদুস মুরগী আর ডিমের চেয়ে সাধারন মানুষের কাছে দেশী মুরগীর রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তাই এর দামও বেশী। দেশী মুরগীর একটি অসুবিধা হলো এর মড়ক লাগা। অনেক সময় দেখা যায়, গ্রামে মড়ক লেগে প্রায় গৃহস্থ বাড়ীর মুরগীগুলো মরে গেছে। স্থা নীয়রা বলে ‘হিরা’ লাগা। এই ‘হিরা’ লাগাতেই কৃষানীদের ভয়। তবে হাসিনা আক্তার খুব সতর্ক। মড়ক লাগার আগেই নিয়মিত টিকা দিয়ে দেন পালা মুরগীগুলোকে। নিজেই উদ্যোগী হয়ে সময় মত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থ করেন তিনি। তাই তার বাড়ীতেও মড়ক আসতে পারে না। মুরগীগুলো সুস্থই থাকে। প্রায় তিন বৎসর আগে স্থানীয় রাজগঞ্জ বাজার থেকে তার স্বামী মফিজ উল্ল্যাহ পঁচাত্তর টাকা দিয়ে কিনে এনেছিলেন এই গলাছিলা মুরগীটি। গলাছিলা মুরগী দেখে তারা এটিকে পালার জন্য রেখে দিয়েছেন। গত তিন বছরে প্রচুর বাচ্চা হয়েছে এই মুরগী থেকে। তাঁরা জানান এর ডিম থেকে সব বাচ্চাই কিন্তু গলাছিলা হয় না। ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ মুরগী গলাছিলা হয়ে থাকে। মজার ব্যপার হলো গলাছিলা পুরুষ মোরগ, মা মুরগীদের মত এত যদ্ধংদেহী হয় না। গলাছিলা পুরুষ মোরগ গুলো বাচ্চাদের দিকে এত খেয়াল রাখে না। মাসুমা বেগম বলেন, ‘গলাছিলা মুরগী, মা বলে কথা। পুরুষ জাত কি মায়ের মন বুঝে’।


মাসুমা খুব সহজেই মুরগীগুলোর ভাষা বুঝেন। খুব ভোরে আযান হওয়ার আগে খাঁচার ভিতর মোরগ ডেকে উঠে। ‘বেইন্না কালীহাইঞ্চা মোরগ ডাকি উইঠলে আমরা বুজি রাইত হোয়াইগেছে’ অর্থাৎ ‘খুব সকালে মোরগ ডেকে উঠলে আমরা বুঝি রাত পোহায়েছে’। ডিম পাড়ার সময় মুরগীগুলো এক ধরনের ডাক দেয়। তখন গৃহস্থ বঁধুরা বুঝে, সময় হয়েছে, মুরগী ডিম পাড়বে। ডিম পাড়ার জন্য ওরা জায়গাও খুঁজে। তখন ওদেরকে একটি টুকরীর ভিতর খড়কুটো দিয়ে জায়গা করে দেয়া হয়। ডিম পাড়া শেষ হলে আবার তারা এক ধরনের শব্দ করে ডাক দেয়। গৃহস্থ বঁধূরা বুঝে নেয় ডিম পাড়া শেষ হয়েছে। ডিম পাড়ার আগের ডাক আর ডিম পাড়ার পরের ডাক কিন্তু এক নয়। গৃহস্থরা ঠিকই বুঝতে পারে। হাসিনা আক্তার বলেন, ‘মুরগীর খর-খরানি হুইনলে বুঝা যায়’। অর্থাৎ মুরগীর বিশেষ ডাক শুনলে, বুঝা যায়। নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট টুকরীতে বা মুরগীর জন্য বানানো খোঁয়াড় বা বাসায় মুরগীগুলো ডিম পাড়ে। কোন কোন মুরগী এক নাগাড়ে বিশ বাইশটা ডিম দেয়। কোনটি আবার বার-চৌদ্দটি ডিম দিয়েই ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়। তখন মুরগীটি ডিমে তা বসে। তার জন্যও গৃহস্থ বঁধূরা জায়গা ঠিক করে দেয়। ঘরের এক কোনে নিভৃতে আলো আঁধারীতে মুরগীগুলো একুশদিন ‘তা’ দিয়ে যায়। তখন মা মুরগীর নাওয়া খাওয়া একেবারে কমে যায়। একুশ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে ওরা ওখান থেকে বাচ্চাগুলো সহ বাহিরে চলে আসে। তখন দু’চারদিন গৃহস্থ বঁধূরা বিশেষ যত্ন নেয়। হাসিনা আক্তার বলেন ‘তখন বাচ্চাগুলানরে দেইখা কইলজাটা ভইরা যায়। মায়া লাগে’। এই শিশু মুরগীছানা গুলোকে দেখে, হাতে ছুঁয়ে হাসিনা আক্তারেরও কোমল হৃদয়ে মাতৃস্নেহ জেগে উঠে। মুরগী ছানাগুলো হয়ে উঠে ওর কোলের সন্তানের খেলার সাথী। ছানাগুলোও হয়ে উঠে ওর স্নেহ মাখা সন্তান। তাই হাসিনা আক্তার স্নেহের টানে বলেন, ‘আমার পেটের বাচ্চার মত মুরগী বাচ্চাগুলানরে না দেইখলে কইলজা ছ্যাঁৎ করি উঠে’। একটু চোখের আড়াল হলেই অজানা আশংকায় প্রাণটা ধড় ফড় করে উঠে। মুরগীর ডিম পাড়া শেষ হয়ে গেলে মুরগী ‘উমে’ বসে। অর্থাৎ ডিমে তা দেওয়ার জন্য বসে। গৃহস্থ বঁধূরা সব মুরগীতে তা বসায় না। মুরগীগুলো ‘উমে’ থাকলে আর ডিম পাড়ে না। তাই উম ভাঙ্গানোর জন্য তারা বিশেষ ব্যবস্থা নেন। সে মুরগীর গলার মধ্যে শুপারীর খোলের ছোট টুকরো মধ্যখানে ফুটো করে কেটে মাথাটি ভিতরে গলিয়ে ঢুকিয়ে দেয়। মুরগীগুলো সে টুকরাগুলো গলায় নিয়ে অস্বচ্ছি বোধ করে। কোথাও বসতে পারে না। তখন স্বাভাবিক ভাবে ‘উম’ নষ্ট হয়ে যায়। মুরগীগুলোও আবার কয়দিনের মধ্যেই ডিম পাড়া শুরু করে। কেউ কেউ আবার ‘উম’ ভাঙ্গার জন্য মুরগীগুলোকে পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। অথবা পা বেঁধে দু’একদিন ঝুলিয়ে রাখে। এর পর পরই মুরগীগুলো স্বাভাবিক হয়ে আসে। স্বাভাবিক হলেই ওরা আবার ডিম পাড়া শুরু করে। মুরগীর এই আচরনের সাথে গ্রাম বাংলার গৃহস্থ বঁধূরা খুবই অভ্যস্থ ও পরিচিত। তবে সব মুরগী গলাছিলা মুরগীর মত নয়। গ্রাম বাংলায় মুরগীর আছে নানা রকমের জাত। এক এক মুরগীর আছে এক এক রকমের নাম। বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন জনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে এ পর্যন্ত প্রায় বাইশ জাতের মুরগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এক এক জাতের মুরগী এক এক রকম আচার আচরণ করে। অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের। সন্ধান পাওয়া মুরগী গুলো হলো, লেংড়া, ময়ূরী, বন(শিকারী) মোরগ, ঝুঁটি, ছাইয়া, ধূন্দা মুরগী, উট, ধলি, সিংহ, মোয়াল্লা (গলাছিলা), ইয়াছিন, ঘোড়া, ঘিলা, বাইন্যা, জিরাফ, কোকিলা, ঝুঁটিমোছা, জড়া, হেজা, হাঁসাহেজা, সোনাপায়া, হিলি প্রভৃতি। এই মুরগীগুলোর কিছু কিছু দেখতে খুবই সুন্দর। গৃহস্থরা বাড়ীর সুন্দরের জন্যও এগুলো লালন পালন করেন। যেমন, ময়ূরী, সিংহ, কোকিলা। তবে সব মুরগীর ঊর্দ্ধে গৃহস্থদের বেশী প্রিয় গলাছিলা মুরগী। কারণ এ মুরগীগুলো সকল শত্রুদের কাছ থেকে নিজেকে যুদ্ধ করে বাঁচিয়ে রাখে। আর বাঁচিয়ে রাখে তার সন্তানদের। গৃহস্থ বঁধূরা এ জাতের মুরগীর উপরই বেশী নির্ভরশীল।

সল্লা গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিন জানান, প্রথমেই এ মুরগীকে দেখলে কিছুটা কিম্ভূত কিম্বাকার মনে হয়। কারণ এর ধড় থেকে মাথা পর্যন্ত লম্বা ঘাড়ে কোন পালক থাকে না। ঘাড়ের মধ্যে শুধু চামড়া থাকায় ঘাড় দেখা যায় লাল টুকটুকে। রোদের আলো পড়ে এটি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে। তখন সত্যিই এদের যুদ্ধংদেহী মনে হয়। আত্মরক্ষার জন্য এরা খুব হিংস্র হয়ে উঠে। এদের উমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে গৃহস্থ বঁধূরাও থাকে সঙ্কামুক্ত। তাই গলাছিলা মুরগী বা হক্কুনী মুরগীর এত কদর, এত আদর।



প্রথম আলো

No comments:

Post a Comment

About Me

My photo
Mahmudul Huq Foez Free-lance journalist, Researcher.