Scrollwhite

মাহমুদুল হক ফয়েজ My name is Mahmudul Huq Foez, I am a journalist, leaving in a small town, named Noakhali , which is situated in coastalzila of Bangladesh

হোমপেইজ | আর্টিকেল | ছোটগল্প | ফিচার | মুক্তিযুদ্ধ | বনৌষধি | সুস্বাস্থ্য | কবিতা | যোগাযোগ

জীবনের ভার বইছে সুরমা মিয়া

জীবনের ভার বইছে সুরমা মিয়া
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

পানির অপর নাম যদি হয় জীবন, তাহলে জীবনের অপর নাম কি? সারা জীবন পানির ভার টেনে টেনে বৃদ্ধ সুরমা মিয়ার মনের গহীনে এ প্রশ্নেরই উদয় হয় বার বার। দুঃখ হতাশায় দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে কোলাহলময় জীবন থেকে অনেক দূরে দাঁড়িছে আজ। কুঁজো হয়ে যাওয়া ন্যুজ শরীরের থল থলে চামড়াগুলো বিবর্ন হয়ে গেছে। ভার বাইতে বাইতে কাঁধে ঘা হয়ে গো-কাঁদার মত অবস্থা হয়েছে। এখান শরীর আর চলতে চায় না। মাঝে মাঝে পায়ের পাতা ফুলে যায়, হাঁটতে পারে না। কখনো থাকতে হয় উপোষ কখনো আধা পেটে কাটিয়ে দেয় সময়। তবু এ বয়সেও তার ডাক পড়ে। নির্দিষ্ট হোটেল বা কোন বাড়ীতে পৌঁছে দেয় পানি।

প্রায় পঞ্চাশ/পঞ্চান্ন বছর ধরে পানি টানার কাজ করছে সুরমা মিয়া। নোয়াখালীর সেই পুরানো শহর থেকে শুরু। তখন তার বয়স অল্প। সে সময় শহরে কোন পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল না। তখন ছিল বড় দীঘি আর ছিল ইঁদারা। রান্নার জন্য প্রয়োজন দীঘির পানি। যাদের পানির প্রয়োজন দীঘি থেকে পানি নিয়মিত আনার লোক চাই তাদের। কিন্তু যাকে তাকে দিয়ে পানি আনলে তো আর বিশ্বাস থাকে না, ভাল বিশুদ্ধ পানি চাই। বিশ্বস-তার দরকার। পানি সঙ্গে যে জীবনের প্রশ্নটি জড়িত। সুরাম মিয়া বিশ্বস-তার সঙ্গে সে কাজের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়। সেই যে শুরু আজও তার শেষ নেই। সময় অনেক গড়িয়ে গেছে। ন্যুব্জ থেকে ন্যুব্জ হয়েছে সুরমা মিয়ার এক সময়ের যৌবন উদ্দাম পেশীবহুল শক্ত সার্মথ্য শরীর।

প্রথম শহরের নির্দিষ্ট কয়টি হোটেলে রান্না ও খাওয়ার পানি সরবরাহ করত। সেই পুরানো শহর থেকে শুরু। তখন শহর নদীতে ভেঙ্গে যাচ্ছিল। মনি-য়ার ঘোনায় বড় মসজিদের পুকুর আর লাল দীঘি থেকে পানি তুলতে হত। পাশেই ছিল উকিল পাড়া। সেকান্দার সাহেবের বাসায় পানি পৌঁছে দিত। প্রতি ভার দশ পয়সা। দিনে পঁচিশ/ত্রিশ ভার পানি বিভিন্ন দোকান আর বাসায় পৌঁছে দিয়ে সে সময়ের হিসেবে আয়ও হত বেশ। দু’টাকা পৌঁনে দু’টাকায় ভালভাবেই দিন চলে যেত। তারপর শহর সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেলে সবাই চলে আসে এখানে। নতুন করে আবার শহর পত্তন হয় মাইজদীতে। সুরমা মিয়াও চলে আসে এখানে। সেই একই কাজ। পুরানো শহরে মতিপুরে ছিল তার পৈতৃক বাড়ী। উমর আলী রাজমিস্ত্রীর বাড়ী বলে সুপরিচিত ছিল। বাবা আনছার আলী ছিল গৃহস্থ। তাদের জমি ছিল তিন কানি বা তিন একর ষাট শতক। নদীতে সব ভেঙ্গে গেছে। দীর্ঘদিন পর সে জমি সাগর থেকে জেগে উঠলেও বেহাত হয়ে গেছে। অন্যেরা ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে দখল করে নিয়েছে। এখন শহরের পাশেই লক্ষ্মী নারায়ণপুরে এক চিলতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে। দু’ছেলে, দু’মেয়ে। ছেলেরা আলাদা থাকে। স্বামী- স্ত্রীর সংসারটি কোন রকমেও চলতে চায় না এখন। তবু জীবনের বোঝা তো বইতে হবে। যতক্ষন দেহে প্রাণ থাকে। দীঘির স্বচ্ছ জলে স্থির দৃষ্টি ফেলে অস্পট স্বরে সুরমা মিয়া বলে যায় ‘শেষ শ্বাসটুকু পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতেই হবে’।

মুক্তকন্ঠ
ঢাকা শনিবার, ৮ মে, ১৯৯৯


No comments:

Post a Comment

About Me

My photo
Mahmudul Huq Foez Free-lance journalist, Researcher.