Scrollwhite

মাহমুদুল হক ফয়েজ My name is Mahmudul Huq Foez, I am a journalist, leaving in a small town, named Noakhali , which is situated in coastalzila of Bangladesh

হোমপেইজ | আর্টিকেল | ছোটগল্প | ফিচার | মুক্তিযুদ্ধ | বনৌষধি | সুস্বাস্থ্য | কবিতা | যোগাযোগ

গোপালপুর গনহত্যা

গোপালপুর গনহত্যা
মাহমুদুল হক ফয়েজ

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আগস্টের ১৯ তারিখে পাক বাহিনী এক নৃশংস হত্যাকান্ড চালিয়েছিল নোয়াখালীর গোপালপুরে। চৌমুহনী-লক্ষীপুর সড়কের পাশে বেগমগঞ্জ থানার চার কিলোমিটার পশ্চিমে গোপালপুর গ্রাম। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই গ্রামের অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। ১৯ আগস্ট সকাল আটটার সময় পাক-বাহিনীর প্রায় দুই শ’ সৈন্য গোপালপুর বাজারে প্রবেশ করে। তাদের সঙ্গে বিশ পঁচিশ জন রাজাকারের একটি সশস্ত্র দল ছিল। হায়নারা এসেই বাজারের চারদিক ঘিরে ফেলে।
সেদিন সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। তখন সে বাজারে অর্ধশত দোকানে দুই শ’ থেকে আড়াই শ মানুষ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিল। পাকবাহিনী অতর্কিতে আসায় আনেকেই প্রথমে কিছু বুঝতে না পেরে হতভম্ব হয়ে পড়ে। আবার অনেকেই যে যদিকে পেরেছে দৌড়ে পালিয়েছে।
এক পর্যায়ে তারা বাজারের সবাইকে এনে লাইন করে দাঁড় করায়। এভবে ষাট সত্তর জনকে নিয়ে আসে। তারা সবাই ছিলো নিরিহ গ্রামবাসি। তাদের মধ্য দু’একজন শান্তি কমিটির সদশ্যও ছিল। শান্তিকমিটির আড়ালে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের নানা ভাবে সহযোগীতা করত।কিন্তু পাকিস্তানী সৈন্যদের কাছে তাদের পরিচয় দিয়েও তারা রক্ষা পায়নি। তাদের মধ্যে ছিল সে এলাকার প্রাক্তন চেয়ারম্যান মাহবুবুল হায়দার চৌধুরী ( নশা মিয়া ) ।
হায়নারা এসে তাদের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান যানতে চায়।এর পর তারা একে একে সব দোকান তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকে। ছিদ্দিক উল্লা নামের একজনের দোকানে পায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। এ অবস্থায় রক্তপিপাসু হায়নারা ক্রোধে ফেটে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে লাইনে দাঁড়ানো সবাইকে পোলের উপর এ্নে আবার লাইন করে দাঁড় করায়। তারপর সেই নিরস্ত্র মানুষদের দিকে লক্ষ করে স্বয়ংক্রিয় অত্যাধুনিক রাইফেল দিয়ে ব্রাশফায়ার করতে থাকে। পাখির মত একে একে লুটিয়ে পড়লো সবাই। শুধু গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি রক্ত পিপাসু হায়নারা, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে পৈশাচিক উল্লাস করতে থাকে। তখন বর্ষার পানিতে খাল ছিল পুর্ণ।মানুষের তরতাজা রক্তে লাল হয়ে উঠলো সে খালের পানি।
সেদিনের গনহত্যায় যারা শহীদ হন তাদের মধ্যে পঁচিশ জনের নাম পরিচয় জানা গিয়েছিলো। সেদিন অনেকের লাশ পানির স্রোতে ভেসে গিয়েছিলো।
যাঁদের পরিচয় জানা গিয়েছিলো তাঁরা হলেন- মাহবুবুল হায়দার চৌধুরী ( নশা মিয়া ), দীন ইসলাম, হাবিব উল্লাহ্, ইসমাইল মিয়া, অহিদ উল্লাহ্, মোহাম্মদ উল্লাহ্ ( সাহাজাদ পুর ), মোহাম্মদ উল্লা, দুলাল মিয়া, সামসুল হক মাস্টার, মজিব উল্লাহ্, বশির উল্লাহ্, আবুল কাশেম, আবুল বশর ছিদ্দিক, হারিছ মিয়া, ছিদ্দিক উল্লাহ্ মিয়া, মমিন উল্লাহ্ মিয়া, মন্তাজ মিয়া, নূর মোহাম্মদ, আব্দুল মান্নান, মোবারক উল্লাহ্, মোহাম্মদ উল্লাহ দর্জি, আব্দুর রশিদ, আব্দুস সাত্তার, আব্দুল করিম, ডাঃ মোহাম্মদ সুজায়েত উল্লাহ্,
সেদিনের গণহত্যার স্বরণে গোপালপুরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে।

মুক্তকন্ঠ
বুধবার, ১৯ আগস্ট, ১৯৯৮

No comments:

Post a Comment

About Me

My photo
Mahmudul Huq Foez Free-lance journalist, Researcher.