মহিষের খামার
মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
নোয়াখালীর দক্ষিণে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে মহিষের প্রজনন খামার গড়ে ওঠার রয়েছে উজ্বল সম্ভবনা। প্রকৃতির এক অফুরান উদারতায় সাগর থেকে নিয়মিত জেগে উঠছে পলিমাটি সমৃদ্ধ নতুন নতুন চর। সেই চর উঠার আগে জোয়ার ভাটার সময় মানুষ দেখতে পায় দূর সমুদ্রে কাছিমের মত বিশাল পিঠ দিয়ে ভেসে উঠছে নতুন চরের নিশানা। এই চর ভাটার সময় জাগে আবার জোয়ারের সময় ডুবে যায়। মানুষ নাম দেয় ডুবার চর। কিছুদিন জোয়ার ভাটার জলতরঙ্গের খেলায় স্তরে স্তরে পলিমাটি গড়ে এক সময় সেটি পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়ে উঠে। নতুন চরে গজায় ছোট ছোট উরি জাতীয় এক প্রকার উলুঘাস। মানুষ সেই চরকে আবার নতুন নাম দেয় ‘উরির চর’। ধীরে ধীরে আরো গজায় নলখগড়া জাতীয় প্রচুর ঘাস। সেই সময় বাথানের মালিকেরা তাদের মহিষের পালকে সাগরের পানিতে সাঁতরিয়ে নিয়ে যায় সেই চরে। এই নতুন উরি আর নলখগড়া মহিষের খুব প্রিয় খাদ্য। মহিষগুলোও মহানন্দে খোলা নির্মল পরিবেশে সেখানে চরে বেড়ায়। সাগরের জোয়ারে যখন চরের উপর পানি উঠে যায় তখ্ন মহিষ গুলো নাক মুখ উঁচিয়ে বিরাট দেহ নিয়ে পানিতে ডুবে থাকে। তখন এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়। কিছুক্ষ্ণের মধ্যেই ভাটায় যখন চর আবার জেগে উঠে তখন আর এক রূপ দেখা দেয়। এভাবে দিন কয়েকের ভিতর সম্পুর্ণ চর জেগে উঠে। নতুন চর জাগার সময় মহিষদের শক্ত পায়ের চাপে চরের মাটিও শক্ত হতে থাকে। এতে প্রাকৃতিকভাবেই এক অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এভাবে প্রতি বছরই নোয়াখালীর দক্ষিণে লাখ লাখ একর নতুন ভূমি সাগর বক্ষ থেকে জেগে উঠছে। এ সকল চরে সরকারি উদ্যোগে মহিষের প্রজনন কেন্দ্র গড়ে উঠলে এক বিপু্ল সম্পদ উৎসের সৃষ্টি হবে। অর্থনীতিতে আসবে এক নতুন দিগন্ত। এ এলাকার মহিষের দুধে আছে প্রচুর প্রোটিন। রামগতি হাতিয়ার দই এ অঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ব্যাক্তি পর্যায়ে অনেকে ঢাকা ও চট্টগ্রমে কিছু কিছু বাজারজাত করছেন।
নোয়াখালীর চরের বাথান মালিকদের আছে বিশাল বিশাল মহিষের পাল। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন অবস্থাপন্ন মালিকদের কাছ থেকে মহিষ সংগ্রহ করে গড়ে তুলেছে বিশাল বাথান। ইসমাইল মিয়া নামের বাগ্গার চরের এক বাথানিয়ার আছে প্রায় দুইশ’টি মহিষ। কিশোর নূরুদ্দিন আর কাশেম সেই বাথান দেখা শোনা করে। মহিষগুলো থাকে দল বেঁধে। সধারনতঃ ওরা দলছুট হয়না। কিশোর নূরুর ডাকে ওরাও সুবোধ বালকের মত সাড়া দেয়। যেন পোষমানা প্রিয় বন্ধু। এত বড় একটি বাথান মাত্র দু’ একজনের তত্বাবধানে আছে তা ভাবলেও অবাক হতে হয়। প্রাকৃতিক ভাবে লালন পালন করা এই মহিষগুলোর তেমন কোন রোগবালাই নেই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটি এ অঞ্চলে বিশাল কৃষি শিল্প হিসাবে গড়ে উঠতে পারে।
লোকসংবাদ
১ জুন, ১৯৯৮
No comments:
Post a Comment